অথবা, পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পদ্ধতিগুলো এবং এর ব্যর্থতা ও সফলতা আলোচনা কর।
উত্তর: ভূমিকা: স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশে এ যাবৎকাল গৃহীত বিভিন্ন পরিকল্পনাসমূহ প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, মূল্যায়ন তথা সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করলে বলা যায় যে, যদিও এসকল পরিকল্পনা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। তথাপি উন্নয়নের গতিধারাকে এটি অনেকাংশে ত্বরান্বিত করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশে পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ১৯৯৭ সালের জুলাই মাস থেকে আরম্ভ হয় যা ২০০২ সালের জুন মাসে শেষ হয়।
পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কৌশলসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. পল্লি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনঃ দেশের প্রায় ৪৮ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার এর নিচে বসবাস করে। এদের বেশির ভাগ পল্লি অঞ্চলে পরিলক্ষিত হয়। তাই অঞ্চলের প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের আত্মকর্মসংস্থানে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হবে। আবার এই উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং শিক্ষা স্বাস্থ্য কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা হবে। এই ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি জোরদার করা হবে।
২. উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে বেসরকারি খাত: দেশের উন্নয়নমূলক বা শক্তি হবে বেসরকারি খাত। প্রয়োজনীয় উপকরণের যোগান, ঋণ, সম্প্রসারণ সেবা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির মাধ্যমে বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরকে প্ররোচনা এবং উৎসাহের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মুদ্রা এবং মূলধন বাজারে প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং উন্নয়ন সাধন করা হবে।
৩. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সুবিধাঃ বর্তমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির হায় ১.৭৫% থেকে ১.৩২% এ হ্রাস করার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্র মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ইত্যাদির কর্মকাণ্ডের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করা হবে। এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে জন্ম নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মাতৃমঙ্গল এবং শিশু স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা সুবিধার সম্প্রসারণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৪. সম্পদ সমাবেশ: পরিকল্পনায় মোট ব্যয় বরাদ্দের ৪৫% দেশীয় সম্পদের সাহায্য মিটানোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আবার মোট আমদানি ব্যয়ের ৪৫% বিদেশী সাহায্য দ্বারা পূরণ করা হবে। বিলাস দ্রব্য সামগ্রীর আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং আমদানি বিকল্প নীতি করে আমদানি ব্যয় হ্রাস এবং মানব সম্পদ রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হবে।
৫. রপ্তানিচালিত শিল্পায়ন: রপ্তানি ভিত্তিক শিল্পায়ন নীতি অনুসরণ করা হবে। এই লক্ষ্যে নিম্নোক্ত ব্যবস্থাসমূহ নেওয়া হবে।
(ক) রপ্তানিযোগ্য শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি এবং যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে উদারনীতি অনুসরণ করা হবে।
(খ) রপ্তানি এবং আমদানি শুল্কের পুনর্বিন্যাস করা।
(গ) পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে সংগতি রেখে বৈদেশিক বিনিময় হার নির্ধারণ।
(ঘ) দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি অঞ্চল স্থাপন করে দেশী-বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরকে রপ্তানিমুখী শিল্প স্থাপনের জন্য সুযোগ এবং উৎসাহ দেয়া হবে।
৬. মানব সম্পদ উন্নয়নঃ মানব সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে-
(ক) বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার সম্প্রসারণ করা হবে।
(খ) মধ্য পর্যায়ে কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণ ঘটানো হবে।
(গ) প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি।
(ঘ) প্রশিক্ষণ এবং গবেষণার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৭. কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিঃ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(ক) অধিক উৎপাদনশীল বীজের ব্যবহার বাড়ানো হবে।
(খ) আধুনিক সারের উৎপাদন বৃদ্ধি করে সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(গ) সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ করা হবে।
(ঘ) বিভিন্ন ধরনের সেবা, প্রশিক্ষণ এবং কৃষি ঋণ সহজলভ্য করা হবে।
(ঙ) কৃষিপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(চ) উন্নত বীজ ও কীটনাশকের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
(ছ) শস্য উৎপাদনের নিবিড়তা বাড়ানো হবে।
৮. অতিরিক নিয়োগ এবং আয়-সৃষ্টিও দেশে অধিক আয় এবং নিয়োগ সৃষ্টির জন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(ক) পল্লি অঞ্চলে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি সম্প্রসারণ’ করে শ্রাইকিমসংস্থান বৃত্তির ব্যবস্থা নেয়া
(খ) কৃষি খাতে সীসার নিবিড়তা বৃদ্ধি করে অতিরিক্ত নিয়োগ সৃষ্টি করা হবে। দয়াময়ী চেনায় ও মনুটি ঠোঁট
(গ) ২ওনাদন, মৎস্যচাখ, হাঁস মুরগি পালন, বনায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আত্মকর্মসংস্থানের। ছোনের সুযোগ বৃদ্ধি করা হবে।
(ঘ) উন্নতমানের বীজ, সার, সেচ কৌশলের সম্প্রসারণ করে পল্লি অঞ্চলে আয় এবং নিয়োগ বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(ঙ) কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির সম্প্রসারণ করা হবে, যাতে হতে অতিরিক্ত নিয়োগ সুবিধা সৃষ্টি হয়।
প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সফলতা ও ব্যর্থতা মূল্যায়ন নিম্নে আলোচনা করা হলো: পঞ্চম পরিকল্পনার পুরোপুরি বাস্তবায়ন এখনও হয় নাই। তাই এর বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা এবং উদ্দেশ্য কতটুকু বাস্তবায়ন হবে সে সমপর্কে চূড়ান্ত মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তারপরও দেশের আর্থ-সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা, অতীতের বিভিন্ন পরিকল্পনার সাফল্য এবং ব্যর্থতার মাত্রা ইত্যাদির আলোকে প্রথমে প্রবিরয়ানা, সুপার্কে নিস্তোর মন্তব্য করা যেতে পারে।
প্রথমতঃ পরিকল্পনার প্রতিটি লেচার সিফাতাড়ী পরিলক্ষিত হয়। যেমন জাতীয়, আয়ের প্রবৃদ্ধি গড়ে বার্ষিক প্রটিনমা এবং চূড়ান্ত, বছর, ৮.৩১৯ ধরা হয়েছে। ঘিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ-পরিকল্পনায় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা, এবং বাস্তবায়নের হারের ে আলোকে বলা যায় এরূপ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা কম।
দ্বিতীয়ত: পরিকল্পনার নোট বাড়ের কম বেশি ৭৭% অভ্যন্তরীণ সম্পদ যারা মিটানোর যে। উচ্চ প্রত্যাশা কর হয়েছে, তা পুরণের সম্ভাবনা, অতি ক্ষীণ বুলা যায়; কারণ পরিকল্পনার প্রথম দুই বছরের ব্যয়ের ৪৫ মাত্র অভ্যন্তরীণ সম্পদ দ্বারা মিটানো সম্ভব হয়।
তৃতীয়তঃ পরিকল্পনার বিদ্যুৎ উৎপাদন ২ ১/২ গুগের বেশি হবে বলে প্রত্যাশ্যা করা হয়েছে। কিন্তু পরিকল্পনীয় ভিনস বছর ইতিমধ্যে গত হয়েছে। বিদ্যুৎ এর চাহিদার তুলনার যথেষ্ট ঘাটতি এখনও রয়ে গেছে। তাই এই উচ্চ আকারকার লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভবাহকে বলা যায়।
চতুর্থতঃ পরিকল্পনার কৃষি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হতে পারে। ১৯৯৭-২০০০ সাল পর্যন্ত দেনে কৃষিতে
বাম্পার ফসলের উৎপাদন থেকে এই আশাবাদ ব্যক্ত করা যায়।
পঞ্চমত: শিল্পের উৎপাদন সম্পর্কে যে ‘লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা বিগত দুটি পরিকল্পনার বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতার। আলোকে অর্জন হওয়ায় যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বলা যায়।
ষষ্ঠতঃ পরিকল্পনায় সুশাসনের কথা বলা, হয়েছে। এক অর্থনৈতি অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অ-অর্থনৈতিক উপাদান হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, নীতি- নির্ধারণে জটিলতা, বায়নে অদক্ষতা ইত্যাদি কারণে পরিকল্পনার সার্বিক সফল বাস্তবায়নের সম্ভবনা কম বলা যায়।