
অথবা, পাকিস্তানের প্রশাসনিক কাজে বাঙালিরা কী ধরনের অবহেলার শিকার হয়?
উত্তরা। ভূমিকা: বাঙালিরা পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৫৬% হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তারা পশ্চিম পাকিস্তানিদের দ্বারা অবহেলিত ও শোষিত হতে থাকে। পাকিস্তানিরা পূর্ব বাংলার অধিবাসীদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদের প্রশাসনিক ছোট বড় সকল পদ ও ক্ষমতা থেকে সুপরিকল্পিতভাবে সরিয়ে রাখে। বাঙালিদের পরিবর্তিত বাংলার প্রশাসন অবাঙালিদের জায়গা করে দেওয়া প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এ সকল বৈষম্যের মাধ্যমে পূর্ব বাংলায় পুরোদমে ঔপনিবেশিক শাসন শুরু করে।
পাকিস্তানের প্রশাসনে অবহেলিত বাঙালিদের অবস্থান: ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত এ সুদীর্ঘ ২৩ বছরে মাত্র একবার
বাঙালিরা রাষ্ট্রপ্রধান পদ লাভ করে (১৯৪৭-১৯৫১)। পাকিস্তানের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর পর বাঙালি খাজা
নাজিমউদ্দীন রাষ্ট্রপ্রধান হয় কিন্তু তিনি ছিলেন নামেমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান। তার সময়ে প্রকৃত ক্ষমতা ছিল প্রধানমন্ত্রীর হাতে। পাকিস্তান আমলে মোট ৭ জন প্রধানমন্ত্রী হয়। তার মধ্যে মাত্র ৩ জন ছিল বাঙালি, ৩ জনের মধ্যে শুধু হোসেন
শহীদ সোহরাওয়ার্দী বাঙালিদের স্বার্থের কথা চিন্তা করেন বাকি ২ জন খাজা নাজিমউদ্দীন ও মোহাম্মদ আলী পশ্চিম পাকিস্তানিদের আজ্ঞাবহ ছিল। পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উচ্চপদে এলিট শ্রেণির প্রাধান্য ছিল বেশি। ১৯৬০-৭০ সাল পর্যন্ত একটি হিসাবে দেখা যায় যে, পাকিস্তানের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল ৬৯টি। তার মধ্যে ৪৫ জনই ছিল পাঞ্জাবি এবং মাত্র ৩ জন ছিল বাঙালি।
কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের মধ্যেও বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব ছিল অত্যন্ত নগণ্য ১৯৬২ সালের একটি জরিপে দেখা যায় যে, সচিবালয়ের মোট ৯৫৪ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে বাঙালি রয়েছে মাত্র ১১৯ জন। মোট পদের মাত্র ১২%।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, প্রশাসনিক কাজে বাঙালিদের দৌড় ছিল মাত্র কেরানি বা ক্লার্ক পর্যন্ত। এর পিছনে পাকিস্তানিদের সুদূরপ্রসারী চিন্তা ছিল। তারা বাঙালিদের প্রশাসনতান্ত্রিক সকল কাজ থেকে বিরত রাখতে চেয়েছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের দমন করার জন্য সকল প্রশাসনিক কাজে অবাঙালিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং বাঙালিদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদের প্রতি চরম অবহেলা প্রদর্শন করা হয়।