পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যকার সম্পর্ক উল্লেখ কর।

অথবা, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র ও প্রদেশের সম্পর্ক নিরূপণ কর।

অথবা, ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামো আলোচনা কর।

উত্তরঃ ভূমিকা: ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভিত্তি ছিল দ্বিজাতি তত্ত্ব। ধর্মীয় দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রেক্ষিতে পাকিস্তান ভারত সৃষ্টি হলেও পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে একমাত্র ধর্ম ছাড়া অন্য সকল বিষয়ে ছিল অমিল। ভাষা, জীবনধারা, সংস্কৃতি, নরগোষ্ঠী ছিল ভিন্ন। মূলত পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যেই নিহিত ছিল বৈষম্যের বীজ। ফলে পাকিস্তান রাষ্ট্রের কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্য বৈষম্যমূলক সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়।

কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যকার সম্পর্ক: ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান রচিত হয়। যা ১৯৫৬ সালের ২৩

মার্চ থেকে কার্যকর। পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খান পাকিস্তান এর শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। ১৯৬২ সালের ১ মার্চ আইয়ুব খান নতুন শাসনতন্ত্র বা সংবিধান ঘোষণা করেন। এ সংবিধানের আলোকে কেন্দ্র ও প্রদেশের সম্পর্ক নিরূপণ হয়। নিচে কেন্দ্র ও প্রদেশের সম্পর্ক বর্ণনা করা হলো। যথা:

জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়: ১৯৫৬ ও ১৯৬২ সালের সংবিধানে জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় কেন্দ্র সরকারের হাতে। এবং অবশিষ্ট অংশ প্রদেশ সরকারের নিকট হস্তান্তর করে।

আইন সংক্রান্ত সম্পর্ক: আইন সংক্রান্ত বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর অধিক প্রাধান্য প্রদান করা হয়। কোনো বিষয়ে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে কেন্দ্রের আইনটি গৃহীত হয় এবং প্রদেশের আইন অসংগতির অজুহাতে বাতিল করা হয়। তবে প্রাদেশিক আইনটি প্রেসিডেন্টের অনুমোদন লাভ করলে তা ঐ প্রদেশের জন্য বলবৎ থাকত।

জরুরি অবস্থা: শাসনতান্ত্রিক বিপর্যয়ে কিংবা দেশের জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে জাতীয় পরিষদ প্রাদেশিক বিষয়েও আইন প্রণয়ন করতে পারত। এছাড়া কোনো রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিষদ প্রাদেশিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারত।

ক্ষমতা অর্পণ: যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার প্রাদেশিক সরকারকে যে কোনো ক্ষমতা বা কার্যভার অর্পণ করতে পারত।
প্রেসিডেন্ট ও গভর্নর সম্পর্ক গভর্নর প্রাদেশিক শাসন বিভাগ ও প্রাদেশিক পরিষদে পর্যাপ্ত ক্ষমতা লাভ করলেও তার কার্যাবলির জন্য তিনি প্রেসিডেন্টের নিকট দায়ী থাকেন।

প্রাদেশিক সরকারের ক্ষমতা: প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষকে প্রাদেশিক শাসন বিভাগের সকল বিষয়ে প্রভূত ক্ষমতা দেওয়া হয় এবং প্রাদেশিক পরিষদকে প্রাদেশিক বিষয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কর আরোপ:

প্রাদেশিক আইনের দ্বারা কর আরোপ করা যেত। তবে তা জাতীয় পরিষদের কোনো আইনের সীমারেখা অতিক্রম করতে পারত না।

সামুদ্রিক সম্পদ: কেন্দ্রীয় সরকার পাকিস্তানের সমগ্র সামুদ্রিক এলাকার তলদেশে অবস্থিত সকল জমি, খনিজ দ্রব্যাদি ও অন্যান্য সম্পত্তির মালিকানা লাভ করে।

বৈষম্য দূরীকরণ ও সম্পদের সুসম কটন প্রেসিডেন্ট কর্তৃক গর্বিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ দুই প্রদেশ ও প্রদেশের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সকল প্রকার বৈষম্য দূর করার প্রকল্প প্রণয়ন করে এবং বৈদেশিক আয়সহ রাষ্ট্রের সকল সম্পদ বণ্টনের বিষয়ে বৈষম্য দূরীকরণের প্রকল্প গ্রহণ করে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, পাকিস্তান ছিল ইসলামি প্রজাতন্ত্র যুক্তরাষ্ট্রীয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধানে কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট অধিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়। কেন্দ্র সরকার প্রাদেশিক সরকারের কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করতে পার। প্রদেশের উপর কেন্দ্রীয় সরকারের আধিপত্য বজায় ছিল।