প্রাদেশিক আইনসভার গঠনপ্রণালি আলোচনা কর।

অথবা, প্রাদেশিক আইনসভার গঠনপ্রণালি ব্যাখ্যা কর।

অথবা, প্রাদেশিক আইনসভার গঠনপ্রণালি বর্ণনা কর।

উত্তর: ভূমিকা: ভারতে ব্রিটিশ শাসনকে জনগণ মনেপ্রাণে কখনোই মেনে নিতে পারেনি। তাই ব্রিটিশ শাসনের প্রারম্ভ থেকেই ভারতীয়রা শাসনতান্ত্রিক সুবিধার দাবিতে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা এবং স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে ব্রিটিশ সরকার ও ব্রিটিশের স্বার্থ রক্ষার্থে ভারতবাসীকে সামরিকভাবে দমিয়ে রাখার জন্য একের পর এক আইন প্রণয়ন করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সরকার ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করে শাসনতান্ত্রিক সুবিধা প্রদানের অজুহাতে। ফলে দেখা যায়, ভারতবাসী মনেপ্রাণে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনকে সমর্থন দেয়। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রাদেশিক আইনসভার প্রচলন করা হয়। কিন্তু এতে ভারতবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি।

প্রাদেশিক আইনসভার গঠনপ্রণালি: ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী প্রাদেশিক আইনসভা ছিল এক কক্ষবিশিষ্ট। ১৯৩৫ সালের আইন অনুযায়ী এ ব্যবস্থা বাতিল করে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠন করা হয়। এ আইন অনুসারে মাদ্রাজ, মুম্বাই, বাংলা, বিহার, আসাম, উত্তর প্রদেশ এ ৬টি প্রদেশে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার ব্যবস্থা করা হয়। অন্য ৫টি প্রদেশে এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার প্রবর্তন করা হয়। ব্রিটিশরাজ প্রতিনিধি গভর্নরকে প্রাদেশিক আইন পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বলে বর্ণনা করা হয়। দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা যে ৬টি প্রদেশে প্রবর্তন করা হয়। যেখানে উচ্চকক্ষকে বলা হয় Legislative council এবং নিম্নকক্ষকে বলা হয় Legislative assembly আইন প্রণয়নকারি পরিষদ ১৯১৯ সালের আইন দ্বারা পরিষদে সদস্য সংখ্যা ছিল ২০ জন। এ আইন ছিল একটি স্থায়ী প্রবর্তিত শাসনে যে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার ‘প্রবর্তন করা হয় তা বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন ধরনের সদস্য সংখ্যার ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। যেমন- বাংলায় ৬৫ জন সদস্য নিয়ে আইন পরিষদ গঠিত হয়। আসাম আইন বা সংস্থা। এর এক-তৃতীয়াংশ সদস্যকে প্রতি ৩ বছর অন্তর অবসর গ্রহণ করতে হতো। আইন পরিষদ সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ ছিল ৯ বছর। আইন পরিষদের ভোটাধিকার ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রদেশের মোট জনসংখ্যার ১৪% লোক ভোটাধিকার পান, আইন পরিষদের কিছুসংখ্যক সদস্য নির্বাচিত ছিলেন, কিছুসংখ্যক গভর্নর কর্তৃক মনোনীত হতেন। সদস্যদের মধ্য থেকে সভাপতি নির্বাচিত হতেন।

আইন প্রণয়নকারি সভা: প্রাদেশিক আইনসভার নিম্নকক্ষকে বলা হতো Legislative assembly। এ সভার সদস্যরা প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হতেন। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো পৃথক নির্বাচনের ভিত্তিতে। এ সভার মেয়াদকাল ছিল ৫ বছর। তবে গভর্নর ইচ্ছা করলে মেয়াদ শেষ হবার পূর্বেই তা ভেঙে দিতে পারতেন অথবা জরুরি অবস্থায় এর মেয়াদ বাড়াতে পারতেন। বিভিন্ন প্রদেশে এ সভার সদস্য সংখ্যা ছিল বিভিন্ন ধরনের। যথা-বাংলা প্রদেশে ছিল ২৫০ জন, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ছিল ৫০ জন। সভার সদস্যদের মধ্য থেকে স্পীকার বা ডেপুটে স্পীকার নির্বাচিত হতেন। সভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের দ্বারা অনাস্থা প্রস্তাবে স্পীকার ও ডেপুটে স্পীকারকে বাতিল করা যেত, সভায় অধিবেশন বছরে ১ বার অনুষ্ঠিত হতো। গভর্নর সভার অধিবেশন আহ্বান করতে, মুলতবি রাখতে পারতেন অথবা প্রয়োজনবোধে ভেঙে দিতে পারতেন। তিনি আইন পরিষদে বক্তৃতা দিতে পারতেন। এছাড়া দেখা যায় যে, প্রাদেশিক আইনসভা নামেমাত্র ছিল, সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করত গভর্নর।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রাদেশিক আইনসভা দ্বিকক্ষ করা হয়। কিন্তু গভর্নরের প্রভূত ক্ষমতা থাকায় আইনসভা স্বাধীনভাবে আইন প্রণয়ন করতে ব্যর্থ হয়। কাজেই ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৫ সালে ভারতীয় আইনে প্রাদেশিক আইনসভাকে দ্বিকক্ষ করলেও । ভারতীয়দের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়।