“প্লেটা কল্পনাবিলাসী এবং এরিস্টটল বাস্তববাদী ছিলেন” এ সম্পর্কে আলোচনা কর।

অথবা, “প্লেটোকে বলা হয় কল্পনা বিলাসী এবং এরিস্টটলকে বলা হয় বাস্তববাদী দার্শনিক” ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ভূমিকা: প্লেটো এবং এরিস্টটল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দুই চিন্তানায়ক। উভয়ের চিন্তার কোন কোন ক্ষেত্রে সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও এদের মধ্যে বৈসাদৃশ্যও কম নয়। প্রকৃত অর্থে প্লেটো ছিলেন একজন ভাববাদী দার্শনিক অন্যদিকে এরিস্টটল ছিলেন বাস্তববাদী দার্শনিক। তবে তাদের এ ভিন্নতার পাশাপাশি মৌলিক বিষয়ের ঐকমত্যও কম।

প্লেটো কল্পনাবিলাসী এবং এরিস্টটল বাস্তববাদী ছিলেন: প্লেটো ও এরিস্টটলের রাষ্ট্রচিন্তা বা দর্শন তুলনামূলক আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা প্লেটোকে একজন কল্পনাবিলাসী এবং এরিস্টটলকে বাস্তববাদী বলে আখ্যায়িত করতে পারি। প্লেটো ছিলেন কল্পনাপ্রবণ ও সংশ্লেষণবাদী। তাঁয় আলোচনার পদ্ধতি ছিল অবরোহ বা অবৈজ্ঞানিক। তাঁর রিপাবলিক গ্রন্থটি কল্পনাপ্রসূত। তিনি আদর্শ রাষ্ট্রে যে শিক্ষাব্যবস্থা, সাম্যবাদ ও দার্শনিক রাজার শাসন কায়েম করতে চেয়েছিলেন, তা অবাস্তব এবং তাতে রোমান্টিকতা বেশি।

উপমা ও রূপকের ব্যবহার তাঁর উপস্থাপিত যুক্তিকে স্নান করেছে। সেজন্য বলা হয়, Plato is the father of political philosophy। অপরদিকে, এরিস্টটল ছিলেন বাস্তববাদী। তিনি আরোহ বা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করেন। সেজন্য বলা হয়, Aristotle is the father of political science. ১৫৪টি রাষ্ট্রের সংবিধান পর্যালোচনা করে তিনি সরকারের শ্রেণিবিভাগ করেন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্রের স্বেচ্ছাচারিতা রোধ করেন। তিনি বিপ্লবতত্ত্ব সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তা আজও প্রযোজ্য। তিনি প্রথম নীতিশাস্ত্র হতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে পৃথক করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর চিন্তাধারার মূলভিত্তি ছিল ইতিহাস, অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা। তাই তাঁকে বাস্ত ববাদী বলা হয়।

প্লেটো ও এরিস্টটল একই সামাজিক ও রাজনৈতিক পটভূমিতে রাজনৈতিক দর্শনচর্চা করেন। দু’জনের আর্থসামাজিক অবস্থা ও দৃষ্টিভঙ্গি ছিল একই প্রকৃতির। প্লেটোর দর্শনচর্চা কেন্দ্রে এরিস্টটল ২০ বছর অবস্থান করেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরিস্টটল ছিলেন প্লেটোর ছাত্র। ছাত্র শিক্ষকের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও মৌলিক বিষয়ে ভিন্নতা থাকার কথা নয়। বস্তুত উভয়ের রাষ্ট্র দর্শনের মূল লক্ষ্য ছিল মানবকল্যাণ ও আদর্শ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করা। তাদের গবেষণার পদ্ধতিটাই মাত্র ভিন্ন ছিল। কিন্তু মৌলিক বিষয়ে প্লেটো ও এরিস্টটলের মধ্যে যে কোন পার্থক্য নেই এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, প্লেটো ও এরিস্টটলের আদর্শকে মূল্যায়ন করতে বলা হয়, “প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের মধ্যে রোমান্টিকতার প্রাধান্য দেখা যায়, অন্যদিকে এরিস্টটলের আদর্শ রাষ্ট্রের মধ্যে বাস্তবধর্মীতার সাক্ষাৎ মেলে।” সুতরাং প্লেটো কল্পনাবিলাসী এবং এরিস্টটল বাস্তববাদী এ উক্তিটি যথার্থই সঠিক।