অথবা, প্লেটোর ন্যায়তত্বের ধরন বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ ভূমিকা: প্রাচীনকালে গ্রিক দার্শনিকদের মধ্যে প্লেটোও ছিলেন বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী। খ্রিস্টপূর্ব ৪২৭ অব্দে এথেন্সের এক অভিজাত পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। তিনি যেসব গ্রন্থ রচনা করেন, তার মধ্যে The Republie অন্যতম। এ গ্রন্থের একটি বিকল্প নাম আছে ‘Treatise Concerning Justice’, এ বিকল্প নাম থেকেই বুঝা যায় যে, ন্যায়বিচারের প্রকৃতি, সঠিক ধারণা এবং তার সঠিক অবস্থান নির্ণয় করাই ‘Republic’ গ্রন্থের মৌলিক বিচার্য বিষয়। অধ্যাপক সেবাইন বলেছেন, “ন্যায়ধর্মের ধারণার মাধ্যমেই রিপাবলিকের বিভিন্ন মতবাদ চূড়ান্ত রূপ লাভ করেছে।”
প্লেটোর ন্যায়তত্বের বৈশিষ্ট্য: নিম্নে প্লেটোর ন্যায়বিচারের কতকগুলো বৈশিষ্ট্য বা ধরণ উল্লেখ করা হলো:
১. যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মবিভাগ: প্লেটোর ন্যায়বিচার প্রত্যেকের জন্য প্রকৃত যোগ্যতা ও শিক্ষার ভিত্তিতে সমাজে তার নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে দেয়।
২. ব্যক্তি ও রাষ্ট্র অবিচ্ছেদ্য: তাঁর ন্যায়বিচারে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের মধ্যে কোন মৌলিক পার্থক্য নেই।
৩. পূর্ণাঙ্গ জীবন পদ্ধতি: এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন পদ্ধতি।
৪. আধ্যাত্মিক পদ্ধতি: এটি ব্যক্তিসংঘাত ও শ্রেণিসংঘাতের জন্ম দেয় না। কারণ এটি আধ্যাত্মিক পদ্ধতি।
৫ . স্থাপত্যশিয়ে অনুকরণ: ন্যায়বিচার স্থাপত্যশিল্পের অনুরূপ।
৬. সৎ মানুষে রূপান্তরিত করে : ন্যায়নীতি শুধু পূর্ণ ও সৎ নাগরিকই সৃষ্টি করে না, বরং তা ব্যক্তিকে সৎ মানুষে রূপান্তরিত করে।
৭. চারিত্রিক গুণাবলির বিকাশ: ন্যায়বিচার মানুষের চারিত্রিক গুণাবলির বিকাশ সাধন করে।
৮. রাষ্ট্রীয় ও নৈতিক জীবন একই: ন্যায়বিচারের নীতি অনুসারে রাষ্ট্রীয় ও নৈতিক জীবনের কোন পার্থক্য নেই।
৯. মানুষকে পরিপূর্ণ করে: ন্যায়বিচার মানুষের জীবনকে পরিপূর্ণ করে তোলে।
১০. শিল্প কৌশল: ন্যায়বিচার একটি শিল্প কৌশল। অন্যান্য শিল্পের মতো ন্যায়বিচারের অনুশীলন ও উৎকর্ষতা
লাভশিক্ষার মাধ্যমে সম্ভব।
১১. কল্যাণ নিহিত: ন্যায়বিচারের মধ্যেই ব্যক্তি ও সমাজের কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, ন্যায়তত্ত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও প্লেটোর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিশ্লেষণ করলে তার ন্যায়বিচার তত্ত্বের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের কোন ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। প্লেটো তাঁর ন্যায়ধর্মে প্রত্যেক মানুষকে তার স্ব-স্ব বৃত্তিতে থাকার উপর জোর দিয়েছেন। এ ধারণা কোন আইনগত ধারণা নয়। এতে গণতান্ত্রিক নীতিবোধ বিঘ্নিত হলেও এটি একটি অবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নয়।