প্লেটোর বর্ণিত শিক্ষাব্যবহার স্তরসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, প্লেটোর শিক্ষা ব্যবহার শুরগুলো কী কী?

অথবা, প্লেটোর শিক্ষা ব্যবস্থার ধাপসমূহ উল্লেখ কর।

অথবা, প্লেটোর শিক্ষা ব্যবহার পর্যায়সমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভূমিকা: প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থা একটি সামাজিক প্রক্রিয়া, যার দ্বারা একটি সমাজের ইউনিটসমূহ সামাজিক চেতনা ও প্রেরণায় ভরপুর করে তোলে এবং সামাজিক চাহিদাগুলো পরিপূর্ণ করে। এটি এমন একটি মাধ্যম যার দ্বারা ব্যক্তি অতি সহজেই সমাজে নিজেকে খাপখাইয়ে নিতে পারে এবং নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যেতে প্রেরণা লাভ করে। প্লেটো ন্যায়ভিত্তিক আদর্শ, রাষ্ট্রের বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। প্লেটোর কল্লিত আদর্শ রাষ্ট্রের মূলভিত্তি ছিল শিক্ষাব্যবস্থা। প্লেটোর মতে, “ভালো শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে যে কোন উন্নতি সম্ভবপর। কাজেই শিক্ষাকে যদি অবহেলা করা হয় তবে রাষ্ট্র অন্য যা কিছুই করুক তাতে কিছুই আসে যায় না।”

প্লেটো বর্ণিত শিক্ষাব্যবস্থার ভর: প্লেটো শিক্ষাব্যবস্থাকে দুটি প্রধান স্তরে বিভক্ত করেছেন। যথা:

১. প্রাথমিক শিক্ষা ও ২. উচ্চতর শিক্ষা।

১. প্রাথমিক শিক্ষা: প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার লক্ষ্য হবে শিশুর অন্তরে মহৎ ভাবমূর্তি সৃষ্টি করা। প্লেটোর মতে, প্রাথমিক শিক্ষার বয়ঃসীমা হবে শৈশব থেকে ২০ বছর পর্যন্ত। প্রাথমিক শিক্ষা প্রধানত দুটি পর্যায়ে বিভক্ত থাকবে। যথা:

ক. সংগীতমূলক শিক্ষা: প্লেটো সংগীতমূলক শিক্ষার মাধ্যমে আত্মা এবং মনের ইন্ধন যুগিয়েছেন। তিনি
সংগীতমূলক শিক্ষার দ্বারা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ অবদান কবিতা, গান, গঠনমূলক শিল্প ইত্যাদির বিশদ ব্যাখ্যা ও গবেষণা করেছেন। এগুলো চর্চার মধ্য দিয়ে শিশুরা প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের সুযোগ লাভ করবে।

খ. ব্যায়ামমূলক শিক্ষা: এ পর্যায়ে শিক্ষাব্যবস্থায় অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীগণ শারীরিক ব্যায়াম বা দেহচর্চার মধ্য দিয়ে
নিয়মানুবর্তিতা ও আত্মসংযম আয়ত্ত করতে শিখবে এবং তৎসঙ্গে মানবোচিত গুণাবলির উৎকর্ষ সাধন করতে শিখবে।

২. উচ্চতর শিক্ষা: প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থায় উচ্চতর শিক্ষা তিনটি স্তরে বিভক্ত। যথা:

ক. ২০ থেকে ৩০ বছর: এ সময় গভীরভাবে গণিত, জ্যামিতি, সংগীত ও জ্যোতিষশাস্ত্র শিক্ষা করতে হবে। শিক্ষা শেষে একটি বাছাই পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চতর শিক্ষার দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচিত করা হবে।

খ. ৩০ থেকে ৩৫ বছর: এ পর্যায়ে উচ্চ দর্শনের জ্ঞান অর্জন অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এর আগে উচ্চতর দর্শন শিক্ষা দেয়া হবে না। কেননা পরিণত বয়স ছাড়া উচ্চতর দর্শন গ্রহণ একটু জটিল হয়ে যায়।

গ. ৩৫ থেকে ৫০ বছর: এ পর্যায়ে বাস্তব কর্মসাধনার কৌশল শিক্ষা দেয়া হবে। এ সময়ের শিক্ষার্থীগণ রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করবে। এ বয়সে শিক্ষার্থীদের উপর রাষ্ট্রের দায়িত্ব অর্পণ করা হলে সুশাসন পাওয়া সম্ভব হবে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, প্লেটো তৎকালীন সমাজব্যবস্থার উপর নির্ভর করে তাঁর শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন। তাই তাঁর তত্ত্বে কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি থাকতেই পারে। তবুও তাঁর প্রণীত শিক্ষাব্যবস্থা যে একটি আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা এবং ‘রিপাবলিক’ গ্রন্থ যে শিক্ষার উপর লিখিত উত্তম গ্রন্থ এটি বেশিরভাগ দার্শনিকই এক বাক্যে স্বীকার করেছেন।