বর্তমান সময়ে কী কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি প্রসারিত হচ্ছে?

অথবা, বর্তমানে কি কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি প্রসারিত হচ্ছে? আলোচনা কর।

অথবা, সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি প্রসারিত হওয়ার কারণ কি?

উত্তরঃ ভূমিকা: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সাথে সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধিও সম্প্রসারিত হচ্ছে। কেননা বর্তমান বিশ্বে মানুষের রাজনৈতিক জীবনের সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর আকার ধারণ করছে। ফলে বর্তমান সময়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচ্যসূচিকে সুনির্দিষ্ট সীমানা বা গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধিও পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রসারিত হচ্ছে।

বর্তমান সময়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি প্রসারিত হওয়ার কারণ: বর্তমান সময়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি বা বিষয়বস্তু ব্যাপকভাবে প্রসারিত বা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. বিশ্ব ব্যবস্থার পরিবর্তন: তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক সম্প্রসারণের ফলে বিশ্ব ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এর সাথে সাথে সম্প্রসারিত হয়েছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা পেলেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অভ্যুদয় ঘটছে নতুন শক্তি বা শক্তি জোটের যা বহু মেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থার ইঙ্গিত বহন করে। এর ফলে রাষ্ট্রের কার্যাদি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সম্প্রসারিত হচ্ছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি।

২. তথ্য প্রযুক্তির সম্প্রসারণ: বর্তমান বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে ঘটেছে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন তথা সম্প্রসারণ। তথ্য প্রযুক্তির দ্রুত সম্প্রসারণের সাথে সাথে মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষারও সম্প্রসারণ হচ্ছে এবং মানুষ নিজেকে উন্নয়নের জন্য কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে রাষ্ট্রের কার্যাবলি সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৩. কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের উদ্ভব: আধুনিক রাষ্ট্র কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। ফলে রাষ্ট্রের সনাতন কার্যাবলির পরিবর্তে আধুনিক কার্যাবলির পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সাথে সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৪. বিশ্বায়নের প্রভাব: বর্তমান বিশ্ব সবকিছুতে সমান অংশীদার হতে চাচ্ছে। যার ফলে রাষ্ট্রের কার্যাবলি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিশ্বায়নের প্রভাবে এক দেশ আরেক দেশের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে চাচ্ছে। এর ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৫. পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি: বর্তমানে রাষ্ট্রগুলো জাতীয় রাষ্ট্র হলেও কেউ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। নিজেদের উন্নয়নের জন্য তারা কোন না কোনভাবে একজন অন্যজনের উপর অর্থাৎ এক রাষ্ট্র আরেক রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। পারস্পরিক এ নির্ভরশীলতা বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন নতুন ধারণার সংযোজন করছে যা বর্তমান সময়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধির বিষয়ভুক্ত হয়ে পড়ছে।

৬. আন্তর্জাতিক তৎপরতা বৃদ্ধি: বর্তমান সময়ে রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। এক রাষ্ট্র আরেক রাষ্ট্রের উপর আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এর ফলে তারা একে অপরের সাথে সংঘর্ষে বা যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে। আন্ত র্জাতিক সংগঠনগুলো আবার এসব উত্তেজনা হ্রাস করার ক্ষেত্রে অর্থাৎ শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা করার ক্ষেত্রে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। এসব আন্তর্জাতিক তৎপরতা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি প্রসারিত করছে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, উপর্যুক্ত কারণে বর্তমান সময়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে মানুষর জ্ঞানের পরিধির সম্প্রসারণ, তুলনামূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থার উদ্ভাবন, আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সম্প্রসারণ প্রভৃতি কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি প্রসারিত হচ্ছে। যার ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান শুধুমাত্র সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখায় সীমাবদ্ধ থাকছে না বরং এটি একটি স্বতন্ত্র ও সমৃদ্ধ আলোচনা শাস্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে।