অথবা, বাংলাদেশের আশার কর্মসূচি বা ভূমিকা উল্লেখ কর।
উত্তর: ভূমিকা: আশা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ আত্মনির্ভরশীল ক্ষুদ্র আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। এর পুরোনাম হচ্ছে Associafian For Social Advancement-ASA। আশা তার সৃষ্টিলগ্ন থেকে ক্রমাগত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এটি জনসাধারণের মাঝে শিক্ষা, ঋণদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিধি বাড়াচ্ছে। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়নে আশার ভূমিকা অনস্বীকার্য হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশে আশার কার্যক্রম বা অবদানসমূহঃ বাংলাদেশে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হিসেবে আশার কার্যক্রম বেশ বিস্তৃতি লাভ করেছে। উক্ত কার্যক্রমের বিবরণ নিম্নে দেওয়া হলোঃ
১. তৃণমূল পর্যায়ে প্রতিষ্ঠান গঠনঃ আশা তৃণমূল পর্যায়ে দল গঠন করে থাকে। এতে গ্রাম ও শহরের দরিদ্র পুরুষ ও মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। প্রতিটি দলে ১৫-৩০ জন সদস্য থাকেন। সদস্যদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দান, ক্ষুদ্র ঋণ ও দলীয় অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সকর্মসংস্থানের সৃষ্টি ও উদ্যোক্তার জন্ম হয়। ফলশ্রুতিতে দারিদ্র্য বিমোচনের কাজ অধিকতর ফলপ্রসূ হয়।
২. শিক্ষা কার্যক্রমঃ শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষার প্রসারে আশা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। রাজধানী ঢাকাতে উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করতে আশা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ ভাবেই আশা শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে।
৩. বেসরকারি অংশীদারিত্বঃ এ ক্ষেত্রে আশা ১৯৯৫ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। বর্তমানে ৫০টি অংশীদার NGO আশার মডেল বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছে। ক্রমান্বয়ে এদের সংখ্যা বাড়ছে।
৪. ক্ষুদ্র ঋণ দান কার্যক্রমঃ আশা প্রচুর ক্ষুদ্র ঋণ দান করে থাকে। গরিব মহিলাদেরকে প্রত্যেকে ৫.০০০ অনাদিকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ২০,০০০ টাকা থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করে থাকে। এজন্য সার্ভিস চার্জ ১২-১৫% নেওয়া হয়। এছাড়াও বেকার পুরুষদের কর্মসংস্থানকে বেগবান করতে প্রতিবছর মেয়াদে ১,০০০ থেকে ৪,০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণদানের ব্যবস্থা করা হয়। ফলশ্রুতিতে এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দ্রুত ঘটছে।
৫. সঞ্চয় ও মূলধন গঠন: আশা তার সদস্যদের সাপ্তাহিক ও মাসিক সঞ্চয় প্রদানে বাধ্য করে। সঞ্চিত অর্থের মাধ্যমে মূলধন গঠনের যেমন অভ্যাস গড়ে উঠে ঠিক তেমনি উক্ত সঞ্চিত অর্থ মূলধন হিসেবে সদস্যরা নিজেদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে লাগাতে পারে। এতে করে তারা সহজেই আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠে।
৬. বিমা কার্যক্রমঃ আশা বিমা কার্যক্রম ও পরিচালনা করে থাকে। সাপ্তাহিক ১০ টাকা জমা রেখে মৃত্যুর পর জমা টাকার ৬ গুণ ও মৃত্যু না হলে মেয়াদান্তে লভ্যাংশসহ আসল ফেরৎ দেওয়ার ব্যবস্থাও করে থাকে আশা। আশার বিমা দুই ধরনের। যথা- ১. ঋণ বিমা, ২. জীবন বিমা।
৭. সচেতনতা সৃষ্টিঃ আশা তার সদস্যদের মাঝে ব্যাপক সচেতনতার সৃষ্টির চেষ্টা করে। এটি উন্নয়ন শিক্ষার মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করে। এ ছাড়াও আশা তার সদস্যদেরকে দলীয় বিভিন্ন নিয়ম-কানুন, নির্দেশাবলি ও আলোচনা সভার মাধ্যমে ও দায়িত্বশীল ও অধিকার সচেতন করে তুলতে বেশ তৎপরতা দেখিয়ে থাকে।
৮. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কার্যক্রমঃ আশা আজ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে। ফলস্বরূপ ভারত, পাকিস্তান, নাইজেরিয়াসহ বিশ্বের ১৭টি দেশে আশার মডেল অনুসৃত ও বাস্তবায়িত হচ্ছে। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়েছে।
৯. স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম: আশা দরিদ্র সদস্যদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এর আওতায় এটি হৃদরোগ ও কিডনি রোগসহ ৬টি জটিল রোগের চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। তাছাড়া এটি বিশুদ্ধ খাবার পানি, আর্সেনিক পরীক্ষা, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি স্থাপনের ক্ষেত্রেও বেশ ভূমিকা রেখে চলেছে।
১০. প্রশিক্ষণ দানঃ প্রশিক্ষণ দান আশার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হিসেবে গণ্য। প্রতিবছরে অসংখ্য কর্মী, গবেষক, সদস্য, ব্যাংকার, ব্যবস্থাপক, ক্ষুদ্রঋণ সরবরাহকারীসহ আশার কর্মকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্বকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এতে করে কার্যক্রম আরো গতিশীল হয়ে থাকে।
১১. কর্মীদের সেবাদান কার্যক্রমঃ আশা তার সমস্ত কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের সেবাদানে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। যেমন- কর্মীদের জন্য কল্যাণ তহবিল, কর্মী বিমা, দ্রুত বেতন-ভাতা পরিশোধ বিধান, ক্ষতিপূরণ প্রদান, চাকরি নিশ্চয়তা দান প্রভৃতি বেশি উল্লেখযোগ্য।
১২. কারিগরি সহায়তা দানঃ আশা ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের পাশাপাশি উন্নয়ন যাতে নিশ্চিত হয় সে লক্ষ্যে কারিগরি সহায়তা প্রদান করে থাকে। তাই ক্ষুদ্র আর্থিক ব্যবস্থার ওপর নেতৃত্ব দানে আশার ভূমিকা অতীব হিসেবে গণ্য হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশে আশা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অগ্রদূত। দারিদ্রদ্র্য বিমোচন থেকে শুরু করে দায়িত্বশীল নাগরিক প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে ভূয়সী ভূমিকা রেখেছে এই আশা। তাই বাংলাদেশের সার্বিক কল্যাণ সাধনের নিমিত্তে আাশার কার্যক্রমের গুরুত্ব অপরিহার্য।