বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের উপযোগিতা বর্ণনা কর।

অথবা, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।

উত্তর: ভূমিকা: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অন্যতম আলোচ্যবিষয় হলো রাজনীতি। রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের মাধ্যমে রাজনীতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান পাওয়া যায়। এজন্য বর্তমানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কেননা বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞ। তাই এ শাস্ত্র অধ্যয়ন করা অত্যাবশ্যক।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব: নিম্নে বাংলাদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো:

১. সুনাগরিকের শিক্ষা অর্জন: যে কোন রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন হচ্ছে সুনাগরিক। কেননা তারাই পারে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে। বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে সর্বপ্রথম দরকার রাষ্ট্রের সুনাগরিক তথা সচেতন নাগরিকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান নাগরিককে সুনাগরিকতা অর্জনের জন্য দিকনির্দেশনা দেয়। সেজন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমেই বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক বিবেক, বুদ্ধি ও আত্মসংযম ইত্যাদি সুনাগরিকের গুণাবলি সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা লাভ করতে পারবে।

২. উদারতা ও সহনশীলতা: বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সকল রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব, উদারতা ও সহনশীলতা বজায় রেখে চলেছে। সেজন্য শান্তিময় বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিককে উদার ও সহনশীল হতে হবে। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নাগরিককে উদারতা ও সহনশীলতার শিক্ষাদান করে থাকে। সুতরাং রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিকের উদার ও সহনশীলতা অর্জনের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারবে।

৩. তরুণ সমাজকে সচেতন করার জন্য: রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে আগামীদিনের নাগরিকদের উপর। রাষ্ট্রের তথা গোটা বিশ্বের কল্যাণ সাধনের জন্য তরুণ সমাজকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞান আবশ্যক। সুতরাং বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে সচেতন করার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়ন করা প্রয়োজন।

৪. দেশপ্রেম বৃদ্ধি করা: যে রাষ্ট্রের নাগরিকের মধ্যে দেশপ্রেমের অভাব রয়েছে, সে রাষ্ট্র কখনোই পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। সেজন্য বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য সকল নাগরিককে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার ফলে নাগরিকের মধ্যে দেশপ্রেম বৃদ্ধি পায়।

৫. সুশাসনের জন্য: রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রাষ্ট্রের উৎপত্তি, প্রকৃতি, আইন, ন্যায়বিচার প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়ে থাকে। ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়ন করা প্রয়োজন।

৬. অধিকার ও কর্তব‍্য সম্পর্কে ধারণা: প্রত্যেক সচেতন নাগরিককে তাঁর অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার। বিশেষ করে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা পাওয়া যায় না। সেজন্য এদেশের নাগরিক রাষ্ট্রীয় কাজে বেশি উৎসাহ বোধ করে না। সুতরাং রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের মাধ্যমে আমরা নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করতে পারব।

৭. আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন: বর্তমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা ভঙ্গুর বলে অনেক বিদেশি মহল মত প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ সর্বদা পরমুখাপেক্ষী। সেজন্য এ পরমুখাপেক্ষী থেকে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিককে রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চা করা আবশ্যক। কেননা রাষ্ট্রবিজ্ঞান আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের শিক্ষা দেয়।

৮. কল্যাণ রাষ্ট্রের শিক্ষা লাভ: বাংলাদেশ একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। এ কল্যাণ রাষ্ট্রকে সফল করার জন্য রাষ্ট্রীয় কাজে জনগণের অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। সেজন্য জনগণকে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জান অর্জন করতে হবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান নাগরিককে এ সম্পর্কে শিক্ষাদান করে।

৯. সুযোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলা: পৃথিবীর যে কোন রাষ্ট্রকে যোগ্য আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সর্বপ্রথম প্রয়োজন রাষ্ট্রের সুযোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টি করা। বিশেষ করে বাংলাদেশ জন্মলগ্ন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাবে তার যোগ্য আসনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে নি। রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চা বাংলাদেশের নাগরিকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার ফলে রাষ্ট্রে সুযোগ্য নেতৃত্বের সৃষ্টি হবে।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বর্তমান বিশ্বের সাথে বাংলাদেশকে তাল মিলিয়ে চলতে হলে এবং বাংলাদেশের অবস্থান আরও মজবুত ও দৃঢ় করতে হলে দেশের প্রতিটি নাগরিককে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কারণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সঠিক জ্ঞান অর্জন ছাড়া বাংলাদেশ উন্নত ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। রাষ্ট্রবিজ্ঞান নাগরিক তথা সরকারকে উন্নয়নের পথনির্দেশ করে। সেজন্য Paul Janet বলেছেন, “Political science is the part of social science which treats of the foundations of the state and principles of the government.”