বাংলাদেশে প্রবীণদের সমস্যা কি কি? এ সমস্যা সমাধানে প্রবীণ হিতৈষী সংঘের অবদান আলোচনা কর।

অথবা, বাংলাদেশে প্রবীণদের প্রতিবন্ধকতা কি? এ সমস্যা সমাধানে প্রবীণ হিতৈষী সংঘের ভূমিকা বর্ণনা কর।

উত্তর: ভূমিকা: মানুষের বৃদ্ধ অবস্থায় উপনীত হওয়াকেই প্রবীণ বলা হয়ে থাকে। মানুষ শিশু থেকে প্রবীণ হবে এটা চিরাচরিত নিয়ম। সাধারণত ৬০ বছরের উর্ধ্বের বয়স্ক সকল নর-নারীকেই প্রবীণ হিসেবে গণ্য করা হয় আমাদের দেশে। প্রবীণ মানুষের দেহ শক্তি কমে যায়। তারা সহজে চলাফেরা করতে পারে না। নানান ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। এ দেশের প্রায় ১০ লাখ প্রবীণদের সার্বিক কল্যাণ সাধনের নিমিত্তে গঠিত হয় বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ। এটি প্রবীণদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কার্যকরী অবদান রেখে চলেছে। তাই এই সংঘের গুরুত্ব অত্যধিক।

বাংলাদেশে প্রবীণদের সমস্যাঃ

১. দৈহিক সমস্যাঃ প্রবীণরা দৈহিক সমস্যার শিকার হন বেশি। এ সময় তাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিক, মাথা ব্যথা, হাড়ের ক্ষয়রোগ, নিদ্রাহীনতা, মলমূত্র ত্যাগ, অক্ষমতাজনিত বিভিন্ন দৈহিক সমস্যায় ভুগেন।

২. মৃত্যু ভয়ঃ প্রবীণদের মাঝে মৃত্যুভয় বেশি কাজ করে। এটা এক ধরনের সমস্যা হিসেবে গণ্য হয়। ফলশ্রুতিতে তারা দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে মনোযোগী হতে পারে না। বরং তারা ধর্ম-কর্মেই নিবিষ্ট থাকতে চায়।

৩. মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থতাঃ প্রবীণদের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থতার সৃষ্টি অহরহ ঘটে চলেছে। সমাজের অধিকাংশের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়াতে প্রবীণ পিতামাতার মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়। তাছাড়াও অনেকে প্রবীণ বাবা-মাকে ভরণপোষণ দেয় না। ফলশ্রুতিতে তারা ভিক্ষাবৃত্তি বা এ জাতীয় কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলেও পরিপূর্ণভাবে মৌলিক চাহিদা পূরণে সক্ষম হয় না।

৪. মানসিক দুশ্চিন্তাঃ প্রবীণদের মানসিক দুশ্চিন্তা অত্যন্ত বেশি। বৃদ্ধ বয়সে প্রবীণরা ছেলে মেয়েদের, বউদের কটুক্তি, একাকিত্ব, ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা, সম্পত্তির সুষ্ঠু ভাগ বাটোয়ারা, ধর্মকর্ম, মৃত্যুভয় নিয়ে মানসিক সমস্যায় ভুগে।

৫. অর্থনৈতিক সমস্যা: আমাদের দেশের প্রবীণরা অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগেন। কেননা এ বয়সে তারা কোনো কাজকর্ম করতে পারে না। অনেকে আবার অবসর ভাতা পেলেও তাদের নাত-নাতনীদের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে নিজস্ব চাহিদা পূরণে হিমশিম খায়। এছাড়াও তারা নিজের পছন্দমতো খাবার, জিনিসপত্র ক্রয় করতে পারে না।

৬. একাকীত্বঃ প্রবীণদের একাকীত্ব নতুন কোনো ঘটনা নয়। প্রবীণদের কেউ স্ত্রী আবার কেউবা স্বামী হারায়। তাই তাদের মাঝে একাকীত্ব দেখা যায়। অনেক সময় দেখা যায়, ছেলেমেয়ে চাকরি করে বলে তারা বাবা-মার পাশে থাকে না। অনেকে মা বাবাকে ছেড়ে দেশের বাইরে থাকায় একাকীত্ব বেড়ে যায়।

৭. চিত্তবিনোদনের অভাবঃ বৃদ্ধ বয়সে মানুষের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হলো চিত্তবিনোদন। কিন্তু আমাদের দেশে বৃদ্ধদের চিত্তবিনোদনের সুযোগ খুবই কম। প্রবীণদের উপযোগী পার্ক, খেলাধুলার ব্যবস্থা নেই। সাথে সাথে রেডিও টেলিভিশনে ও প্রবীণদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয় না।

বাংলাদেশে প্রবীণদের সমস্যা মোকাবিলায় প্রবীণ হিতৈষী সংঘের অবদানঃ বাংলাদেশে প্রবীণদের সমস্যা মোকাবিলায় প্রবীণ হিতৈষী সংঘের অবদান নিম্নরূপ:

১. কর্মসংস্থান প্রকল্পঃ প্রবীণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকাতে তাদেরকে বিভিন্ন আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এ সমস্যার সুষ্ঠু নিরসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ কর্মসংস্থান প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এজন্য গাজীপুরে ছাগল প্রকল্প ও কুমিল্লা কুটির শিল্প প্রকল্প গ্রহণের ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে।

২. হাসপাতাল সেবা: প্রবীণরা নানা ‘দৈহিক সমস্যায় ভুগে। যেমন: ডায়াবেটিক, হাড়ের ব্যথা, নিদ্রাহীনতা ইত্যাদি। তাদের সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক জীবনযাপন সহজ করতেই বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ হাসপাতাল সেবা দিয়ে থাকে। যার আওতায় ঢাকাতে একটি প্রবীণ হাসপাতাল পরিচালনার পাশাপাশি সারাদেশের প্রায় ৪৬টি জেলায় ৫০টি শাখার মাধ্যমে এ সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

৩. সহজলভ্য সেবা: বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈয়। সংঘের সেবা নিতে এর সদস্যদের নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। যা প্রদানের ক্ষমতা ও অনেক প্রবীণের নেই। তাই তাদের জন্য বিভিন্ন সংস্থার অনুদানের মাধ্যমে সেবাকে সহজলভ্য করে চলেছে।

৪. আবাসন সুবিধা প্রদানঃ এ দেশের প্রবীণদের আবাসন সমস্যা বেশ প্রকট। তাদেরকে আবাসন সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ওন্ডহোম গড়ে তোলা হচ্ছে। এখানে বর্তমানে ১৫ জন পুরুষ ও ১১ জন মহিলা বসবাস করছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সুবিধাদি বাড়ানো হচ্ছে।

৫. বিনোদন ব্যবস্থা: বাংলাদেশের প্রবীণদের জন্য বিনোদনের তেমন একটা ব্যবস্থা নেই। এ ক্ষেত্রে প্রবীণ হিতৈষী সংঘ প্রতিটি ওল্ডহোমে একটি টেলিভিশনের ব্যবস্থা করেছে। বাৎসরিক জার্নালসহ বিভিন্ন সময়ে সভা, সেমিনার, মিলাদ, মাহফিলের আয়োজন করে থাকে।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশে প্রবীণদের কিছু সমস্যা থাকলেও প্রবীণ হিতৈষী সংঘ কার্যকরী উদ্যোগের মাধ্যমে তা দূর করে চলেছে। যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।