অথবা, বাংলাদেশে ব্র্যাক এর অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কাজগুলো উল্লেখ কর।
উত্তর : ভূমিকা : বাংলাদেশে যেসব এনজিও কাজ করে যাচ্ছে তার মধ্যে ব্র্যাক অন্যতম। এটি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে ত্রাণ ও পুনর্বাসনমূলক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে BRAC এর যাত্রা শুরু হয়। এদেশের জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন একটা ভালো নয়। এর ফলে প্রতিনিয়ত দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ব্র্যাক তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষাবিস্তার ও অন্যান্য ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। ফলশ্রুতি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে। তাই সুন্দর রাষ্ট্রগঠনে বাংলাদেশকে অবশ্যই ব্র্যাককে স্বাগত জানাতে হবে
বাংলাদেশে ব্র্যাক এর অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কাজঃ বাংলাদেশে ব্র্যাক বিভিন্ন অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কাজ। করে যাচ্ছে। যেগুলোর স্বরূপ নিম্নে বর্ণিত হলো:
১. ক্ষুদ্র ঋণঃ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকল্পে ক্ষুদ্রঋণের গুরুত্ব অত্যধিক। ১৯৭৪ সাল থেকে এদেশের দরিদ্র অসহায় জনগোষ্ঠীকে ব্র্যাক ক্ষুদ্র ঋণ দান করে আসছে। প্রতিবছর এ ঋণদানের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। ঋণগ্রহীতারা এ দেশে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তাদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জনে সক্ষম হচ্ছে।
২. নারী উদ্যোক্তা উৎসাহিতকরণ: ব্র্যাক এদেশের স্বল্প শিক্ষিত শহুরে ও গ্রাম্য নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দানের মাধ্যমে তাদেরকে উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করে। এছাড়াও এটি এসব নারী উদ্যোক্তাদের সহজশর্তে ঋণদান করে দ্রুত অগ্রগতির দিকে ধাবিত করে।
৩. সমর্থনমূলক প্রতিষ্ঠানের জন্মদান: ব্র্যাক এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সমর্থনমূলক প্রতিষ্ঠানের জন্মদান করেছে। যেমন: পোলট্রি খাদ্য, মুরগি, রেশম, গুটির ডিম, সবজি বীজ সরবরাহ ইত্যাদি। ফলশ্রুতিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হয়েছে আরো প্রাণবন্ত।
৪. শহর কর্মসূচি: ব্র্যাক শহর কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ঋণ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ স্যানিটেশন প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ২০০৩ সাল থেকে ১৬,১০,২৭০ জন গার্মেন্টস কর্মীদের মধ্যে ৭৯৮ মিলিয়ন টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে কর্মজীবী মহিলাদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে কাজ করছে।
৫. ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সহায়তাঃ দেশের অগণিত ব্যবসায়ী ঋণের এভাবে ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারে না। আর এ ক্ষেত্রে ব্র্যাক ১৯৯৬ সাল থেকে MELA কর্মসূচির আওতায় ব্যবসায়ী প্রতি ২০,০০০-২,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে। ফলে দেশে ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।
৬. দরিদ্রদের লক্ষ্যভুক্তকরণ: বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি। ব্র্যাক এ অবস্থার উত্তরণে দরিদ্রদের লক্ষ্যভুক্ত করে যাতে তাদের দারিদ্র্য দ্রুত দূর করা যায়। তবে পাঁচটি কৌশল অবলম্বন গ্রহণ করা হলেই কেবল উক্ত পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হতে পারে। আর সেগুলো হলোঃ
(ক) ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন প্রশিক্ষণ;
(খ) সম্পদ স্থানান্তর।
(গ) সমাজ উন্নয়ন।
(ঘ) আবশ্যকীয় স্বাস্থ্য সেবা;
(ঙ) কার্যক্রম গবেষণা।
৭. কর্মসংস্থান ও আয়ের ব্যবস্থাঃ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ও আয়ের ব্যবস্থা গৃহীত না হলে কোনো অর্থনৈতিক উন্নয়নই প্রত্যাশা করা যায় না। ব্র্যাক এদিকটি ভেবে নিম্নোক্ত কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেঃ
(ক) হাঁস-মুরগি ও পশুপালন;
(খ) মৎস্য চাষ;
(গ) সামাজিক বনায়ন;
(ঘ) কৃষি সম্প্রসারণ কর্মসূচি:
(ঙ) রেশম চাষ।
৮. দুঃস্থদের জন্য সহায়তা প্রদান: বাংলাদেশে দুঃস্থ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এদের নিজস্ব কোনো আয়ের ব্যবস্থা নেই সরকারি সহায়তা ও অপ্রতুল ব্র্যাক ১৯৮৫ সাল থেকে WFP এর সহায়তায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দুস্থদেরকে মাসে ৩০ কেজি গম প্রদান করা হয় যা দেড় বছর পর্যন্ত চলে। VGF কার্ডের মাধ্যমে এ গম প্রদান করা হয়। ফলশ্রুতিতে।
৯. শাকসবজি রপ্তানি: ১৯৯৭ ব্র্যাক ও হরটেক্স ফাউন্ডেশন যৌথ উদ্যোগে শাকসবজি রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এতে কৃষকরা বেশি মুনাফা লাভের পাশাপাশি শাকসবজির উৎপাদন, সংরক্ষণ ও পরিবহনে ব্র্যাকের প্রশিক্ষণ পাচ্ছে। যার দরুণ ২০০৩ সাল পর্যন্ত ৪৭২ টন শাকসবজি ও ৮০০ টন গোলআলু বিদেশে রপ্তানি করা গেছে।
১০. গ্রাম সংগঠনের মাধ্যমে দরিদ্রদের সাথে যোগাযোগ : ব্র্যাক এ দেশের দরিদ্র মানুষকে উন্নয়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করাতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে এটি চারটি কৌশলের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। কৌশলগুলো হচ্ছেঃ ক. প্রতিষ্ঠান গঠন, খ. সেবা প্রদান, গ.জনখাত সঞ্চালন, ঘ. ব্যাপক সামাজিক সঞ্চালন।
১১. টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরিঃ বাংলাদেশের কৃষকরা উন্নত জাতের বীজ উৎপাদন করতে পারে না। ফলে উচ্চমূল্যে তা বিদেশ থেকে আমদানি করে থাকে। এহেন পরিস্থিতিতে ব্র্যাক গাজীপুরে ৪টি গ্রিনহাউজসহ একদ্ধি টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি স্থাপন করেছে। তাই খুব সহজেই উন্নতমানের বীজ কৃষকরা পাচ্ছে যা উৎপাদন বৃদ্ধি বেশ সহায়ক হয়েছে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ব্র্যাক একটি নিরপেক্ষ অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। যা এ দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কিছু কর্মসূচি গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে কাজ করে থাকে। ফলে বাংলাদেশের দারিদ্র্যতার পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তাই কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে বাংলাদেশে ব্র্যাকের কার্যগুরুত্ব ব্যাপক হিসেবে চিহ্নিত হয়।