বাংলায় খিলাফত আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, বাংলায় খিলাফত আন্দোলন সম্পর্কে যা জান লিখ।

উত্তর : ভূমিকা : খিলাফত আন্দোলন ভারত উপমহাদেশের প্রথম স্বতঃস্ফূর্ত ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন। হিন্দু ও মুসলমানরা একই মঞ্চে এসে এ আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অংশ নেয়। যদিও শেষপর্যন্ত আন্দোলন সফল হয়নি। কিন্তু, এ আন্দোলনের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক সচেতনতা জাগ্রত হয় তা পরবর্তীকালে বহু আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করে।

বাংলায় খিলাফত আন্দোলন: বাংলায় খিলাফত আন্দোলন একটি গণআন্দোলনে পরিণত হয় এবং হিন্দু ও মুসলমানরা এতে অংশ হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এ আন্দোলনকে জনপ্রিয় করে তোলেন বাঙালি নেতৃত্বে মওলানা আকরাম খাঁ, মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ বাকী, ইসমাঈল হোসেন সিরাজী, আবুল কাশেম এ কে. ফজলুল হক। মওলানা আকরাম খাঁ ও ইসলামাবাদ বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক সফর করেন এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে খিলাফত সভা সংঘটিত করেন। ১৯২০ সালের প্রথম দিকে বঙ্গীয় প্রাদেশিক খিলাফত সম্মেলনে খিলাফত সমস্যা সম্পর্কিত দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অসহযোগ ও বয়কট অব্যাহত রাখার কর্মসূচি ব্যক্ত করা হয়। বঙ্গীয় প্রাদেশিক খিলাফত কমিটি গঠিত হয়। মওলানা আবদুর রউফ সভাপতি এবং আকরাম খানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ১৯২০ সালের মার্চ মাসে খিলাফত প্রশ্নে আলোচনার জন্য মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে খিলাফত প্রতিনিধিগণ ইংল্যান্ডে যান। এর অন্যতম সদস্য ছিলেন বাংলার প্রতিনিধি আবুল কাশেম। ১৯২০ সালের ১৯ মার্চ বাংলায় দ্বিতীয় খিলাফত দিবস পালিত হয়। এই দিন কলকাতার কখন জীবন যাত্রা অচল হয়ে পড়ে এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ বহুসংখ্যক সভা অনুষ্ঠিত হয়। টাঙ্গাইলে সবচেয়ে বড় সভায় জমিদার আবদুল হালিম গজনবী সভাপতিত্ব করেন। কংগ্রেস কমিটিগুলো পাশাপাশি অধিকাংশ জেলায় বহুসংখ্যক খিলাফত কমিটি গঠিত হয়। রংপুর, রাজশাহী নোয়াখালী, ময়মনসিংহ প্রভৃতি জেলার গ্রামবাসী ট্যাক্স দিতে আপত্তি করে। কলকাতা, কর্মসূচির অনুকরণে বিদেশি জন্য বর্জন আদালত ও সরকারি অফিস বয়কট করে। ঢাকার ছাত্ররা স্কুল ও কলেজ বর্জন করে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, আন্দোলন প্রথমদিকে অহিংস হলেও ১৯২২ সালে উত্তর প্রদেশের চৌরাচৌরা থানায় ৩০০০ ব্যক্তি আক্রমণ চালিয়ে একজন ইনসপ্রেক্টর ও ২৫ জন পুলিশকে পুড়িয়ে মারে। এসময় ১৯২৬ সালে কামাল পাশার নেতৃত্বে তুরস্কের প্রজাতন্ত্র ঘোষণা ১৯২৪ সালে খলিফা পদ তুলে দেয়ার পর উপমহাদেশের খিলাফত পন্থিরা হতচকিত হয়। ফলে ভারতে খিলাফত আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পায় এবং ক্রমে ক্রমে তা বন্ধ হয়ে যায়।