অথবা, বাংলায় ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের প্রভাব বিস্তার সম্বন্ধে বিবরণ দাও।
অথবা, বাংলায় ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের প্রভাব বিস্তার সম্পর্কে যা জান তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ভূমিকা: ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে ‘British East india company’-র বিরুদ্ধে সংঘটিত ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলন। এ বিদ্রোহ ছিল পলাশীর যুদ্ধের পরবর্তী একশ বছরের ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের রেস পরিণতি। ১৮৭৫ সালের এ বিদ্রোহ কোম্পানির সেনাদের মধ্যে শুরু হয়ে তা ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলায় বিদ্রোহের প্রভাব: ১৮৭৫ সালের মহাবিদ্রোহ ছিল দীর্ঘদিনের প্রস্তুতির ফল। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. কলকাতায় প্রভাব: উত্তর ভারতে বিদ্রোহ দেখা দিলে তার প্রভাব বাংলার রাজধানী কলকাতাতে এসে পড়ে। ফলে ব্রিটিশ মহলে ভীতির সঞ্চার হয়। ইংরেজদের ধারণা নবাব ওয়াজেদ আলী ও তার অনুচররা কলকাতার জনসাধারণের সহায়তায় বিদ্রোহী হয়ে পড়বে। তবে কলকাতায় তেমন বড় বিদ্রোহ সংঘটিত না হলে জনগণের মধ্যে ব্রিটিশ বিরোধী চেতনার ব্যাপক স্ফুরণ ঘটেছিল।
২. চট্টগ্রাম ও পাশ্ববর্তী অঞ্চলের প্রভাব: ১৮৫৭ সালের ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রামের ৩৪ নং রেজিমেন্টের সিপাহীরা বিদ্রোহী হয়ে সরকারি কোষাগার লুণ্ঠন এবং বন্দীদেরকে মুক্ত করে। ১৮৫৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শ্রীহট্টের ব্রিটিশ সৈন্যদল বিদ্রোহী সিপাহীদেরকে হঠাৎ আক্রমণ করলে অনেক সিপাহী যুদ্ধ করে প্রাণ হারায়।
৩. ঢাকায় প্রভাব : ঢাকাতে বিদ্রোহের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ৩০ জুলাই ঢাকা কলেজে ইউরোপীয় ও স্থানীয় লোকদের এক সভায় একটি পদাতিক ও অশ্বরোহী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ফলে সিপাহীরা এই সংবাদে নিরস্ত্রীকরণে বাধা দেওয়ার জন্য লালবাগ দূর্গে অবস্থান গ্রহণ করে। এই যুদ্ধে ৪০ জন সিপাহী মারা যান এবং অবশিষ্টরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। অন্যদিকে বেশকিছু সিপাহীকে গ্রেফতার করে প্রকাশ্যে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়। এভাবে ঢাকার বিদ্রোহ স্তব্ধ করে দেওয়া হয়।
৪. অন্যান্য অঞ্চলে প্রভাব: যশোরের সিপাহীদের মধ্যে বিদ্রোহের মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। জলপাইগুড়ি, দিনাজপুর ও ময়মনসিংহে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল। জামালপুরের ইংরেজরা পাহারাদার সৈন্য পুলিশ নিয়ে বিদ্রোহীদের উপর আক্রমণ করলে এক সংঘর্ষে বিদ্রোহীরা অনেকেই মারা যায় এবং অনেকেই পলায়ন করে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৮৫৭ সারে মহাবিদ্রোহ ভারতবর্ষের জনগণের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অগ্নিগর্ভ বহিঃপ্রকাশ। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের ন্যায় বাংলায় এর প্রভাব ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। এই বিদ্রোহের ব্যর্থতা থেকে বুদ্ধিজীবী মহল মহাবিদ্রোহকে তাদের সামগ্রিক অগ্রগতির অন্ত রায় হিসেবে মনে করে ব্রিটিশ সরকারের সাথে সর্বপ্রকার সহযেগিতার নীতি গ্রহণ করে।