বিজ্ঞান হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল্যায়ন কর।

অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান কি একটি বিজ্ঞান? আলোচনা কর।

অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করার সপক্ষে যুক্তি দেখাও।

অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান কি আদৌ বিজ্ঞান?

উত্তর: ভূমিকা: রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিজ্ঞানের পর্যায়ভুক্ত কি না তা বিজ্ঞানের সংজ্ঞা ও পরীক্ষানিরীক্ষা বিশ্লেষণের মাধ্যমে তুলনামূলক আলোচনা করে জানা সম্ভব। ১৯৫০ সালে ইউনেস্কো এর আলোচনা মতে সিন্ধান্ত গৃহীত হয় যে, বিজ্ঞান হলো একটি বিষয় সম্পর্কে সুনিয়ন্ত্রিত চিন্তা, অভিজ্ঞতা, ভূয়োদর্শন ও গবেষণাপ্রসূত জ্ঞানভাণ্ডার।” অর্থাৎ, পরস্পর সম্পর্কযুক্ত বিষয়সমূহের শৃঙ্খলিত জ্ঞানকেই বিজ্ঞান বলা হয়। এ প্রেক্ষিতে বিজ্ঞান হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল্যায়ন করা সম্ভব।

বিজ্ঞান হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান: নিম্নে বিজ্ঞান হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল্যায়ন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ: বিজ্ঞানে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ভিত্তিক আলোচনাকে প্রাধান্য দেয়। এ পদ্ধতিগুলোর মধ্যে পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতি, পরীক্ষা নিরীক্ষামূলক পদ্ধতি ও পরিসংখ্যানমূলক পদ্ধতি অন্যতম।

২. তথ্য সংগ্রহ: পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ, গবেষণা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাহায্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রাষ্ট্রের উৎপত্তি, কার্যাবলি, শাসক ও শাসিতের সম্পর্ক, নাগরিকের আচরণ প্রভৃতি বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করা হয়। অর্থাৎ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শ্রেণীকরণ, বিশ্লেষণ প্রভৃতি প্রয়োগ করে সাধারণ সূত্র উদ্ভাবন করা সম্ভব। অন্যান্য বিজ্ঞানের ন্যায় এর তথ্য সংগ্রহও একই।

৩. ভবিষ্যদ্বাণীকরণ: অন্যান্য বিজ্ঞানের আলোচনা, গবেষণা, পরীক্ষা নিরীক্ষা ভবিষ্যদ্বাণী নির্ধারণ করতে সহায়ক হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সিদ্ধান্ত ও গবেষণা পরবর্তীতে রাষ্ট্র, সরকার, আইন ইত্যাদি ক্ষেত্রে গবেষণা ও ভবিষ্যদ্বাণী নির্ধারণে সহায়ক হয়।

৪. সুসংবদ্ধ জ্ঞান: মানুষ মননশীল ও ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন। তবুও তার রাজনৈতিক আচরণের মধ্যে যথেষ্ট সামঞ্জস্য থাকে। এ সুসামঞ্জস্য আচরণ থেকে সুসংবদ্ধ জ্ঞান আহরণ করা সম্ভব। এ সুসামঞ্জস্য জ্ঞানই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভিত্তি রচনা করে। এ জ্ঞান ও সূত্রসমূহ ভবিষ্যৎ সমস্যা সমাধানের পথ নির্দেশ করে। অন্য বিজ্ঞানেও একইভাবে সুসামঞ্জস্য জ্ঞান আহরণ করা হয়।

৫. বিষয়ের ব্যাপকতা: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু ব্যাপক। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞানে যেভাবে পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও বর্ণনা করা হয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞানেও সেরূপ পর্যবেক্ষণ, নিরীক্ষণ ও গবেষণাকার্য পরিচালনা করা হয়।

৬. নিয়মনীতির উপস্থিতি: বিজ্ঞানে যেমন সাধারণ সূত্র প্রয়োগ করে সর্বজনীন নিয়মনীতি প্রতিষ্ঠা করে তেমনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রাজনৈতিক গবেষণালব্ধ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক তথ্য ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সাধারণ বিধি গড়ে তোলা যায়। বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক জীবনের উত্থানপতন, কাঠামোর পরিবর্তন ইত্যাদি পর্যালোচনার দ্বারা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা সর্বজনীন নিয়ম ও নীতি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

৭. গবেষণাগারের উপস্থিতি: বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য যেমন গবেষণাগারের প্রয়োজন তেমনি
রাষ্ট্রবিজ্ঞানেও গবেষণাগার আছে। সমগ্র রাজনৈতিক জগৎই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষণাগার। এখানে সবসময়ই মানুষের রাজনৈতিক জীবন ও কার্যাবলি নিয়ে গবেষণা হয়ে থাকে। এজন্যই এরিস্টটলপন্থি রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি বিজ্ঞান।

৮. সিদ্ধান্ত গ্রহণ: রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিভিন্ন বিষয় আলাপ আলোচনা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিজ্ঞানের একটি অন্যতম বিষয় হল বহুবিধ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এজন্যই রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলে অভিহিত করা যায়। এসব
সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা চলে।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি বিজ্ঞান। একে প্রকৃতপক্ষে খাঁটি বিজ্ঞান বা প্রকৃত বিজ্ঞান বলা যায় না। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে আখ্যায়িত করতে কোন দ্বিধা দ্বন্দ্ব নেই।