বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি সম্পর্কে যা জান লিখ।

অথবা, বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধার অন্তর্ভুক্তি সম্পর্কে আলোচনা কর।

উত্তরা। ভূমিকা: ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতিত নারীদের ‘বীরাঙ্গনা’ স্বীকৃতি দিয়ে তাঁদের সম্মাননা জানান। সেই বীরাঙ্গনারা পরিচিতি পাল্টে এখন থেকে পরিচিত হবেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে।

বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি: ১৩ অক্টোবর ২০১৪ জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সভায় একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী এবং রাজাকারদের হাতে নির্যাতিত নারীদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপর ২৯ জানুয়ারি ২০১৫ জাতীয় সংসদে ঐ প্রস্তাব পাস হয়। পরে তাদের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ জারীকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৪১ জন বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর ‘৭১ এ নির্যাতিত বীরাঙ্গনারা প্রথমবারের মতো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।

গেজেটে প্রকাশিত বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা গেজেটে প্রকাশিত তালিকা অনুসারে প্রথম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন ময়মনসিংহের ফতেহপুর গ্রামের ময়মনা খাতুনসহ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ৪১ জন বীরাঙ্গনা হলেন-

ময়মনসিংহ: ৪ জন ফুলপুর উপজেলার ময়মনা খাতুন ও হালিমা খাতুন এবং হালুয়াঘাট উপজেলার জাহেরা খাতুন ও ফাতেমা খাতুন।

হবিগঞ্জ: ১ জন মাধবপুরের মাজেদা খাতুন (ওরফে মাজেদা খাতুন)।

কুষ্টিয়ার: ৪ জন কুমারখালী উপজেলার এলেজার নেছা, মোছাঃ মোমেনা খাতুন, মোছাঃ দোলজার নেছা ও মোছাঃ মজিরন নেছা।

সিলেটে ১ জন- জকিগঞ্জের এশনু বেগম।

রংপুরের ১ জন সদরের মনছুরা বেগম।

ঠাকুরগাঁও ৬ জন রানীশংকৈল উপজেলার সুমি বাসুগী, মালেকা মনি কিসকু, নিহারানী দাস, নূরজাহান বেগম
ও হাফেজা বেগম।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: ১১ জন- রাবিয়া বেগম, গোমস্তাপুর মালেকা বেগম, শিবগঞ্জ; হাছিনা বেগম, গোমস্তাপুর উপজেলার জলো বেগম, সফেদা বেগম, আয়েশা বেগম, রেনু বেগম, হাজেরা বেগম, আবরী বেগম, রাহেলা বেগম এবং সদর উপজেলার লিলি বেগম।

সিরাজগঞ্জের ১৩ জন সদর উপজেলার আয়মনা, কাজীপাড়া উপজেলার আছিয়া বেগম, সদর উপজেলার মোছাঃ সূর্য বেগম, মোছাঃ কমলা বেওয়া, মোছাঃ জয়গণ, মোছাঃ ছুরাইয়া খাতুন, মোছাঃ মাহেলা বেগম, মোছাঃ হামিদা বেওয়া ও মোছাঃ হাসনা বেগম, কামারখন্দ উপজেলার শ্রীমতি রাজুবালা দে, সদর উপজেলার মোছাঃ রহিমা বেওয়া, মোছাঃ ছামেনা খাতুন ও মোছাঃ শামছুন্নাহার বেওয়া।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের ‘বীরাঙ্গনা’ সম্মাননা প্রদান করে, যা পরবর্তীতে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁদেরকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি প্রদান করেন।