ভারতবর্ষে কোম্পানির শাসন হেস্টিংসের অবদান সুদৃঢ়করণে সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, ভারতবর্ষে কোম্পানির শাসন সুদৃঢ়করণে ওয়ারেন হেস্টিংসের ভূমিকা কী ছিল?

অথবা, ভারতবর্ষে কোম্পানির শাসন সুদৃঢ়করণে ওয়ারেন হেস্টিংসের গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তর: ভূমিকা: ভারতবর্ষের শাসনকার্যে যে সকল ব্যক্তি অবদান রেখেছিলেন তাদের মধ্যে ওয়ারেন হেস্টিংস অন্যতম ছিলেন। লর্ড ক্লাইভ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করলেও একটি বণিক কোম্পানি ও রাজস্ব সংগ্রহকারী হিসেবে ওয়ারেন হেস্টিংস সুনাম অর্জন করেছিলেন। রাজস্ব, মুদ্রা, বিচার, পররাষ্ট্র প্রভৃতি ক্ষেত্রে তিনি আমূল পরিবর্তন সাধনে সক্ষম হয়েছিলেন।

ভারতবর্ষে কোম্পানি শাসন সুদৃঢ়করণে হেস্টিংসের অবদান: ভারতবর্ষে কোম্পানির শাসন সুদৃঢ়করণে হেস্টিংসের অবদান নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার অবসান: হেস্টিংস যখন গভর্নর হিসেবে শাসনভার গ্রহণ করেন তখন ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈত শাসনব্যবস্থার যাবতীয় ত্রুটি ব্যাপকভাবে প্রকাশ লাভ করে। ১৭৭২ সালে হেস্টিংস সরাসরি কোম্পানির হাতে দেওয়ানির যাবতীয় দায়িত্ব ন্যস্ত করলেন। তাই তিনি দ্বৈত শাসনব্যবস্থার অবসান করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন।

২. রাজস্ব সংস্কার: হেস্টিংস দ্বৈতশাসনে প্রবর্তিত রাজস্ব আদায়ের জন্য বাংলার একজন দেওয়ান ও বিহারে একজন দেওয়ান এর যে পদ ছিল তা বাতিল করে দেন এবং রাজস্ব আদায় কার্য পরিচালনার জন্য হেস্টিংস ভ্রাম্যমাণ কমিটি নামে একটি ক্ষুদ্রসভা গঠন করেন। গভর্নর ও তার কাউন্সিল নিয়ে একটি রেভিনিউ বোর্ড গঠন করা হয়।

৩. অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রবর্তন: ওয়ারেন হেস্টিংস ভারতবর্ষে কোম্পানির শাসনকে সুদৃঢ় করার জন্য অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রবর্তন করেন। এ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তিনি কোম্পানির সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন। হেস্টিংস অযোধ্যার নবাবকে রোহিলাখণ্ড জয় করতে সাহায্য করেন।

৪. রাজস্বনীতির পরিবর্তন: হেস্টিংসের প্রথম রাজস্বনীতি সমস্যার সমাধান দিতে না পারায় তিনি বাধ্য হলেন রাজস্বনীতির পরিবর্তন করতে। এ নতুন নীতি রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যাকে ছয়টি অংশে বিভক্ত করে প্রত্যেক ক কাউন্সিলের কাজে সাহায্য করার জন্য একজন করে দেশীয় ক দেওয়ান নিযুক্ত করা হল। হেস্টিংসের সময়ে বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নরূপ ছিল।

৫. হেস্টিংসের যুদ্ধনীতি: হেস্টিংস যখন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিক হন তখন মুম্বাই ও মাদ্রাজ সরকার মারাঠা ও হায়দার আলীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। হেস্টিংসের চেষ্টায় প্রথম মারাঠা যুদ্ধ ও দ্বিতীয় মহীশূর যুদ্ধ ইংরেজদের অনুকূলেই সমাপ্ত হয়েছিল। এ দুই ইংরেজ প্রেসিডেন্সির সাময়িক অর্থ সাহায্য দিয়ে হেস্টিংস সেখানে ইংরেজ শাসন সুদৃঢ় করেছিলেন।

৬. কোম্পানির অর্থের অভাব দূরীকরণ: ওয়ারেন হেস্টিংস কোম্পানির আর্থিক অভাব দূর করার জন্য বৈধ বা অবৈধ যে কোনো উপায়ে অর্থ গ্রহণ করতে দ্বিধা করতেন না। বারানসির রাজা চৈত সিংহ ও অযোধ্যার বেগমদের পীড়ন করে অর্থ সংগ্রহে তিনি সংকোচ বোধ করেননি। এ দুই অভিযোগই তাকে ইম্পিচ করা হয়।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় উপমহাদেশে কোম্পানির শাসনের ভিত্তি স্থাপনের কৃতিত্ব হল ক্লাইভের, কিন্তু এর প্রসারতা ও উৎকর্ষ সাধনে ওয়ারেন হেস্টিংসের অবদান অস্বীকার করার মত নয়। ওয়ারেন হেস্টিংস পূর্ববর্তী শাসনব্যবস্থার যে নীতি তার সংস্কার করেন। শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনে তিনি মৌলিকত্বের প্রমাণ দেন। প্রজাকল্যাণ উপযোগী এক শাসনব্যবস্থা তিনি ভারতে উপহার দেন।