অথবা, ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার কারণ কি ছিল?
উত্তর: ভূমিকা: ব্রিটিশ ভারতে ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলন ছিল সর্বাত্মক গণবিস্ফোরণ। মহাবিদ্রোহের পর এ আন্দোলনকে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ব্রিটিশ বিরোধী অভ্যুত্থান হিসেবে অভিহিত করা হয়। নিম্নে ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ বর্ণনা করা হলো:
আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার কারণ ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভকরলেও শেষ পর্যন্ত কতকগুলো কারণে এ আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছিল। নিম্নে ব্যর্থতার কারণগুলো উল্লেখ করা হলো:
প্রথমত, ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল সমন্বয়ের অভাব। কেননা এ আন্দোলন কোথাও শান্তিপূর্ণ আবার কোথাও হিংসাত্মক রূপ পরিগ্রহ করায় সঠিকভাবে সমন্বয় করা সম্ভবপর হয়নি।
দ্বিতীয়ত, ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ এবং কতিপয় রাজনৈতিক দলের অসহযোগিতা ভারত আন্দোলনের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ ছিল। কৌশলগত মতবিরোধের কারণে জাতীয় কংগ্রেস এ আন্দোলনে যোগদান করলেও মুসলিম লীগ এ আন্দোলন হতে দূরে সরে থাকে।
তৃতীয়ত, ব্রিটিশ সরকারের কঠোর দমননীতি এ আন্দোলনকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে। বিপনচন্দ্রের ভাষায়, “সরকারি দমননীতি ছিল সীমাহীন; সংবাদপত্রের সম্পূর্ণ কণ্ঠরোধ করা হয়; মানুষের শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর যথেচ্ছভাবে স্বয়ংক্রিয় বন্দুক চালানো হয় এবং সর্বত্র পুলিশ ও গুপ্ত পুলিশের তৎপরতা ছিল অব্যাহত-যা সাধারণ মানুষের মনে গভীর ত্রাস সঞ্চার করে।
চতুর্থত, ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার একটি অন্যতম কারণ ছিল পরিকল্পনার অভাব। গান্ধীজি এ আন্দোলন শুরু করলেও তিনি কোনো পরিকল্পিত কাঠামো প্রস্তুত করে যেতে পারেননি। তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলে যান, প্রতি কংগ্রেস কর্মী তার বিবেক অনুযায়ী চলবে এবং কংগ্রেস কর্মী তার নিজের নেতা। এর ফলে আন্দোলনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলন সাফল্যমণ্ডিত না হলেও এ আন্দোলনের ফলে ভারতীয় জনগণের সংগ্রামী শক্তি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। আগস্ট আন্দোলন ছিল এক গণ বিস্ফোরক। ভারতবাসীদের স্বাধীনতা প্রদান করা ভিন্নতম কোনো বিকল্প পথ নেই। এ সত্য ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। মূলত এ আন্দোলন ছিল সাধারণ ভারতবাসীর পুঞ্জীভূত ক্ষোভের সর্বাত্মক ও স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিফলন।