মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধর।

অথবা, মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার প্রকৃতিগুলো আলোচনা কর।

অথবা, ১৯৪২ সালের ক্রীপস মিশন পরিকল্পনার প্রস্তাবসমূহ আলোচনা কর।

উত্তর: ভূমিকা: ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের শুরু থেকেই নানা সংগ্রাম লক্ষ্য করা যায়। ব্রিটিশ সরকার ও বিভিন্ন আইন পাসের মাধ্যমে ভারতীয়দের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ইংরেজদের পক্ষে আর শান্তিপূর্ণভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করা কঠিন বুঝে ১৯৪৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এটলির ঘোষণায় ভবিষ্যৎ সংবিধান নিয়ে আলাপ আলোচনার জন্য একটি মিশন পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এ মিশনের সদস্য তিনজন হলেন, ভারত সচিব লর্ড প্যাথিক লরেনস, বাণিজ্য বোর্ডের সভাপতি স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস, নৌ-বিভাগের প্রথম লর্ড এ.ডি. আলেকজান্ডার। এ মিশন ভারতের শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনা নিয়ে বিভিন্ন দলের সাথে আলোচনা করেন। কিন্তু এ আলোচনা ঐকমত্যে না আসায় মিশন নিজেদের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন-যেটি মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা নামেই পরিচিত।

মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো : মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্যগুলো অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী। এ পরিকল্পনার তিনটি অংশ নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

(ক) ভবিষ্যৎ সংবিধান সম্পর্কিত সুপারিশসমূহ;

(খ) গণপরিষদ সংক্রান্ত প্রস্তাবসমূহ;

(গ) অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্পর্কিত ঘোষণা।

(ক) ভবিষ্যৎ সংবিধান সম্পর্কিত সুপারিশসমূহ নিম্নরূপ:

১. ইউনিয়নের হাতে প্রদত্ত বিষয়গুলো ছাড়া অন্যান্য সকল বিষয় প্রদেশগুলোর হাতে অর্পণ করা হবে।

২. প্রদেশগুলোর অনুরূপ ক্ষমতা দেশীয় রাজ্যগুলোও ভোগ করতে হবে।

৩. প্রতিটি গ্রুপ তাদের ইচ্ছানুযায়ী শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করতে পারবে। গ্রুপগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন সংক্রান্ত বিষয়গুলো ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করতে হবে।

৪. এই সংবিধান রচিত হওয়ার পর যে-কোনো প্রদেশ ইচ্ছা করলে তার সংশ্লিষ্ট গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে।

৫. এ পরিকল্পনায় ব্রিটিশ ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলো নিয়ে ভারত ইউনিয়ন গঠনের প্রস্তাব করা। ভারত ইউনিয়নের হাতে পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ সম্পর্কিত সকল বিষয় অর্পিত হবে। এসব বিষয় পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের ক্ষমতা ইউনিয়নের থাকবে।

(খ) গণপরিষদ সংক্রান্ত প্রস্তাবসমূহ: সংবিধান রচনার জন্য একটি গণপরিষদ গঠিত হবে। এ গণপরিষদের সদস্যগণ জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্যদের দ্বারা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হবে। দেশীয় রাজ্যগুলো প্রদেশগুলোর ন্যায় একই ভিত্তিতে গণপরিষদে প্রতিনিধিত্ব করবে।

(গ) অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় নতুন সংবিধান প্রণীত ও প্রবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন পরিচালনার জন্য প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে কেন্দ্রে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হবে।

উপসংহার: অবশেষে বলতে পারি যে, যদিও ১৯৪৬ সালের মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কিন্তু তারপরও তদানীন্তন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে মন্ত্রিমিশনের প্রস্তাবগুলোর গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে অস্বীকার করার উপায় নেই। এ মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় প্রথমবারের মতো শুধু ভারতীয় সদস্যদের নিয়ে গণপরিষদ গঠনের ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছিল যা ছিল ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটি অতুলনীয় অধ্যায়।