অথবা, মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার শর্তাবলি কী ছিল?
অথবা, মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার শর্তাবলি উল্লেখ কর।
উত্তর: ভূমিকা: ১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয়ী ব্রিটিশরা এদেশের শাসনভার নিজেদের হস্তগত করে।
তাদের শাসন শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতীয়রা নানা সময়ে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন সংগ্রামে লিপ্ত হয়। ব্রিটিশ সরকার এ আন্দোলনকে সাময়িকভাবে বন্ধ করার জন্য একটি পরিকল্পনা করেন। ফলে এই সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৪৬ সালে ক্রিসেন্ট এটলির বিবৃতি অনুযায়ী ভারতের সমস্যা সমাধানের জন্য একটি কমিশন প্রেরণ করা হয় তিন সদস্যর-যা ইতিহাসে মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা হিসেবে সুপরিচিত।
মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার শর্তাবলি: মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার ন অনেকগুলো শর্তাবলি লক্ষ্য করা যায়। তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলো নিম্নরূপ:
১. ভারত ইউনিয়ন গঠন: মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা অনুযায়ী বিটিশ ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলোর সমন্বয়ে একটি ভারত ইউনিয়ন গঠনের প্রস্তাব করা হয়। এসব ইউনিয়নের হাতে পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ সম্পর্কিত সকল বিষয় অর্পন করা হয়।
২. প্রদেশগুলোর দায়িত্ব: মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা অনুযায়ী ইউনিয়নের হাতে পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ প্রদত্ত বিষয়গুলো অন্যান্য সব বিষয় প্রদেশগুলোর হাতে অর্পণ করা হবে।
৩. প্রদেশের স্বাধীনতা: ১৯৪৬ সালের মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা অনুযায়ী সংবিধান রচিত হওয়ার পর কোনো প্রদেশ ইচ্ছা করলে তার সংশ্লিষ্ট গ্রুপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।
৪. দেশীয় রাজ্যগুলোর ক্ষমতা: এ পরিকল্পনায় প্রদেশগুলোর জন্য যেসব অধিকারের কথা বলা হয় অনুরূপ ক্ষমতা দেশীয় রাজ্যগুলোও ভোগ করবে।
৫. সংবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা: ১৯৪৬ সালের আইন অনুযায়ী প্রতিটি গ্রুপ তাদের নিজেদের প্রয়োজনে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে পারবে। এছাড়া শাসন সংক্রান্ত বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়গুলোতে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনও ভোগ করবে।
৬. গণপরিষদ গঠন: ১৯৪৬ সালের মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় বলা হয় যে, সংবিধান রচনার জন্য একটি গণপরিষদ গঠিত হবে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে গণপরিষদের সদস্যগণ প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্যদের দ্বারা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হবে।
৭. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: এ পরিকল্পনার অন্যতম পরিকল্পনা ছিল যে নতুন শাসনতন্ত্র প্রণীত হওয়ার পূর্ব সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন পরিচালনার জন্য প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে কেন্দ্রে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে।
৮. সংবিধানের ধারা পর্যালোচনা ব্যবস্থার প্রবর্তন: ১৯৪৬ সালের মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় ইউনিয়ন ও গ্রুপগুলোর সংবিধানে এমন শর্ত থাকবে যে প্রাথমিকভাবে দশ বছর পর এবং পরবর্তী পর্যায়ে প্রতি দশ বছর অন্তর যেকোনো প্রদেশ তার সংবিধানের ধারা পর্যালোচনা করতে পারবে।
বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত:
১৯৪৬ সালের মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় প্রদেশগুলোকে তিনটি বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত করা হয়। গ্রুপ তিনটি হলো:-
(ক) গ্রুপ ‘ক’ তে ছিল মাদ্রাজ, বিহার, বোম্বাই, বিহার, উড়িষ্যা, যুক্ত প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ। এই ৬টি প্রদেশ নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত হবে।
(খ) গ্রুপ ‘খ’ সিন্ধু, পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ নিয়ে ভারতের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল গঠিত হবে।
(গ) গ্রুপ ‘গ’ গঠিত হয় পূর্ব ভারতের মুসলমান প্রধান বাংলা ও আসাম নিয়ে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা যদিও ব্রিটিশ ভারতে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে উন্নত ও অন্যতম কিন্তু হিন্দু-মুসলমানের বিরোধের ফলে তা কার্যকর হয়নি। তবে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় সর্বপ্রথম ভারত বিভক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত দেওয়া হয়।
সুতরাং মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা ছিল ভারতীয় সাংবিধানিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।