অথবা, মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা কী? মত্রিমিশন পরিকল্পা ব্যর্থ হওয়ার কারণগুলো লিখ।
অথবা, মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা সম্পর্কে লিখ।
উত্তরঃ জুমিকা: ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষে তাদের উপনিবেশিক শাসন দীর্ঘায়িত করার জন্য একেক সময় একেক ধরনের প্রস্তাব পেশ করে ভারতবাসীদের আন্দোলনকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করতে থাকে। এগুলোর মধ্যে ব্রিটিশ সরকারের সর্বশেষ প্রস্তাব ও পদক্ষেপ ছিল মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা। এ মিশন ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধান সম্পর্কে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের নেতাদের সাথে কয়েক দফা আলোচনায় মিলিত হয়। কিন্তু কোনো মতৈক্য ছাড়াই আলোচনা শেষ হয়। সর্বশেষ মন্ত্রিমিশন ১৯৪৬ সালের ১৬ মে ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধান সম্বন্ধে তার নিজস্ব পরিকল্পনা পেশ করেন। এটিই মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা নামে পরিচিত।।
মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা (১৯৪৬): দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর প্রতিশ্রুতি মেতাবেক ভারতের ক্ষমতা হস্তান্তরকে ত্বরান্বিত করতে ব্রিটিশ সরকার ১৯৪৬ সালে জানুয়ারি মাসে ভারত সচিব লর্ড প্যাথিক লরেন্সের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দলকে ভারতে পাঠায়। এর অন্য দু’জন সদস্য হচ্ছেন বাণিজ্য বোর্ডের সভাপতি স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ও যৌথবিভাগের প্রধান এ. ডি. আলেকজান্ডার। ঐ বছর মে মাসে ভারতের প্রস্তাবিত শাসনতন্ত্র সম্পর্কে মিশন যে প্রস্তাব পেশ করে তা ‘মস্ত্রিমিশন পরিকল্পনা’ নামে পরিচিত। এর গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলো হলো:
১. কেন্দ্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা।
২. হিন্দু প্রধান, মুসলমান প্রধান ও আসাম এবং বাংলা নামে ৩টি গ্রুপ গঠন করা।
৩. ভারতীয় ইউনিয়নের অর্পিত ক্ষমতা ছাড়া বাকি ক্ষমতা গ্রুপের কাছে থাকবে এবং প্রতি গ্রুপে একটি গণপরিষদ তৈরি করা হবে।
ব্যর্থতার কারণ: মুসলিম লীগ মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তাদের বিবেচনায় প্রদেশ বা গ্রুপ ব্যবস্থার
মাধ্যমে পাকিস্তান অর্জনের সম্ভাবনা লক্ষ করে।
অন্যদিকে, কংগ্রেস অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন পরিকল্পনা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। তবে তারা স্বাধীন অখণ্ড ও গণতান্ত্রিক ভারতের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য প্রস্তাবিত গণপরিষদে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্ত নেয়।
অপরদিকে, মুসলিম লীগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করলেও বড় লাট লর্ড ওয়াভেল তা প্রত্যাখ্যান করেন। মুসলিম লীগ এ পরিস্থিতিতে জুলাই মাসে মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে পাকিস্তান অর্জন না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দেয়। অথচ পরের মাসেই (আগস্ট ১৯৪৬) বড় লাট কংগ্রেসের নেতা নেহেরুকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান। ১৬ আগস্ট মুসলিম লীগ ভারতের সর্বত্র হরতাল ও প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস পালন করে। ঐ দিনে কলকাতার দাঙ্গা ভারতের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং সংবাদপত্রের ভাষ্যে প্রায় ৫০,০০০ লোক হতাহত হয়। সাম্প্রদায়িক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হলে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষ্যে লর্ড ওয়াভেলের স্থলে লর্ড লুই মাউন্ট ব্যাটেনকে ভারতের বড় লাট নিযুক্ত করেন। লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন ভারতে এসে ভারতের প্রধান দুই দলের সাবে আলোচনায় বুঝতে পারেন যে মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্ভব নয়। এর ফলে এ পরিকল্পনাও পূর্ববর্তী পরিকল্পনার মতো দুই দল মেনে না নেয়ার কারণে ব্যর্থ হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, মন্ত্রিমিশন কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কিন্তু দুই দল এবং লর্ড এর সাথে ঐকমত্য না হওয়ায় তা সম্পূর্ণ রূপে ব্যর্থ হয় এবং এরই সাথে ভারতের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চরম মাত্রায় পৌছায়।