অথবা, মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার ধর্মীয় কারণগুলো লিখ।
উত্তর : ভূমিকা: ১৮৮৫ সালে কংগ্রেস গঠিত হওয়ার ফলে কংগ্রেস জাতীয় সংগঠন হিসেবে সকল ভারতীয় জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু কংগ্রেস ক্রমান্বয়ে হিন্দু পক্ষালম্বন করায় মুসলমানরা তাদের দাবি দাওয়া ও অধিকার থেকে হিন্দুদের দ্বারা বঞ্চিত হতে থাকে। এরই পেক্ষাপটে ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা ও চিন্তাচেতনা থেকে মুসলিম লীগ গঠিত হয়।
ধর্মীয় কারণ: ব্রিটিশ শাসনের মাধ্যমে ভারতে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিশাল একটি দেয়ালের সৃষ্টি হয়। হিন্দুরা ব্রিটিশদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করায় উত্তরোত্তর উন্নতির শীর্ষে পৌঁছে যায় এবং মুসলমানরা তা থেকে পিছিয়ে পড়ে। ফলে উভয়ের মধ্যে অবজ্ঞা ও বিদ্বেষের বীজ অঙ্কুরিত হয়।
ঔপন্যাসিক বঙ্কিম তাঁর লেখায় সন্ন্যাসীর মাধ্যমে বলেছেন, “আমরা রাজ্য চাহি না, কেবল মুসলমানরা ভগবানে বিশ্বাসী নয় বলে তাদের সবংশ নিপাত করতে চাহি।” রাজা রামমোহন রায়ের ধর্ম সংস্কার, স্বামী দয়ানন্দের আর্যসমাজ, গোরক্ষিণী সমিতি, হিন্দু মেলা, শিবাজী উৎসব ইত্যাদি মাধ্যমে ধর্মীয় পুনরুজ্জীবনকে কেন্দ্র করে স্বতন্ত্র হিন্দু জাতীয়তাবাদের ভিত্তি রচিত হয়। ফলে মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় কৃষ্টি ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হতে থাকেন। কারণ H.V. Hudson এর ভাষায়, “মুসলমানদের আচার প্রথা অনেক সময় প্রতিবেশী হিন্দুর কাছে অসহ্য আবার হিন্দুদের কিছু আচার প্রথা মুসলমানদের কাছে অসহনীয় ছিল।”
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, মুসলিম লীগ গঠনে ধর্মীয় কারণ ছিল অন্যতম। মুসলমানরা একটি স্বতন্ত্র জাতি, তাদের স্বতন্ত্র আদর্শের কারণে মুসলমানদের মধ্যে স্বতন্ত্র্য চেতনার সৃষ্টি থেকেই মুসলিম লীগ গঠিত হয়। কাজেই মুসলিম লীগ গঠনে ধর্মীয় কারণ ছিল অন্যতম।