অথবা, মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক কারণগুলো উল্লেখ কর। ইতিহাসে
উত্তর: ভূমিকা: ভারতে ব্রিটিশ শাসনকে মুসলমানরা কখনও মনে প্রাণে গ্রহণ করতে পারেন নি। অন্যদিকে এ সুযোগ গ্রহণ করে হিন্দুসমাজ নিজেদের স্বার্থে ব্রিটিশ শাসনকে স্বাগত জানায়। ফলে হিন্দুরা সকল ক্ষেত্রে স্থান করে নিতে সক্ষম হন। একপর্যায়ে হিন্দু সংগঠন বলে খ্যাত কংগ্রেস হিন্দু নেতাদের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ফলে হিন্দুদের আরও সুবিধা হয়। যদিও কংগ্রেসকে একেবারেই হিন্দু সংগঠন বলা যায় না, বে কংগ্রেসে দ্বিতীয় পর্যায়ের উগ্রপন্থি নেতাদের আচরণের ফলে মুসলমানরা অতিষ্ঠ হন এবং একপর্যায়ে নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য একটি পৃথক সংগঠনের কথা ভাবেন। এর ফলে ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
রাজনৈতিক কারণ: ভারতে ব্রিটিশ শাসনামলের শুরু থেকে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। ফলে ধর্মীয় ভিন্নতা সকল ক্ষেত্রে ব্যবধান রচনা করে। ব্রিটিশ শাসনকে হিন্দুরা প্রথমদিকে স্বাগত জানান এবং নিজেরা ইংরেজি শিক্ষা সংস্কৃতি রপ্ত করে নিজেদের সামাজিক অবস্থান মজবুত করে নেন। কিন্তু মুসলমানরা প্রথম থেকেই ইংরেজদের সাথে সকল সংশ্রব বর্জন করেন। ফলে সকল ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে পড়েন। এভাবে দু’শ্রেণির মাঝে রাজনৈতিক ব্যবধান রচিত হয়। ব্রিটিশ শাসনের সুফলকে কাজে লাগিয়ে হিন্দু নেতারা ধর্মীয় জাতীয়তার ভিত্তিতে হিন্দুদের রাজনৈতিক জাতীয়তার পত্তন করেন। এ সময় অনেক হিন্দু কবি বিশেষত ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, হেমচন্দ্র, নবীন চন্দ্র সেন, রঙ্গলাল বন্দ্যোপধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রাজনারায়ণ বসু, ননী গোপাল মিত্র প্রমুখ National পত্রিকার মাধ্যমে হিন্দু জাতীয়তাবাদের আদর্শ প্রচার করেন। হিন্দুদের শিক্ষার উন্নতির প্রতিষ্ঠিত হয়। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুসলমানদের শিক্ষা জন্য কলকাতায় হিন্দু কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গ্রহণের কোনো সুযোগ ছিল না। এছাড়া হিন্দুদের স্বার্থরক্ষার্থে কিছু সমিতিও গড়ে উঠে। যথা- Land Holders society, Bengal British India society, British India association ইত্যাদি। এসব সমিতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে হিন্দুরা নিজেদের উন্নত করে নেন। ফলে মুসলমানরা এর থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে থাকেন, যা ১৯০৬ সালের মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার প্রেরণা যোগায়।
উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায়, ভারতে ব্রিটিশ সরকারের কাছে দাবি দাওয়া পেশ করার জন্য যেমন ১৮৮৫ সালে সর্বভারতীয় কংগ্রেস গঠিত হয়। ফলে ভারতীয় জনসাধারণ কিছুটা হলেও তাদের প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পান। অন্যদিকে কংগ্রেস যখন নিরপেক্ষ চরিত্র বজায় রাখতে ব্যর্থ হয় তখন কংগ্রেস গঠনের শিক্ষা থেকেই মুসলমানরা আলাদা জাতি হিসেবে টিকে থাকার জন্য দাবি আদায়ের জন্য ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ গঠন করার প্রেরণা পান।