যুক্তিবিদ্যায় ইবনে সিনার অবদান কী?

অথবা, ইবনে সিনার যুক্তিবিদ্যা সংক্ষেপে তুলে ধর।

অথবা, ইবনে সিনার যুক্তিবিদ্যা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

অথবা, ইবনে সিনার যুক্তিবিদ্যার সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।

অথবা, ইবনে সিনার যুক্তিবিদ্যা সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ ভূমিকা: মুসলিম দর্শনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ হলেন ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭ খ্রি)। দর্শনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। তিনি এরিস্টটলের দর্শনের একজন সফল ভাষ্যকার। মুসলিম দর্শনে আল ফারাবি যে প্লেটোবাদী ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি সে ঐতিহ্যেরই বিখ্যাত বক্তা। যুক্তিবিদ্যায় তিনি আল ফারাবি কর্তৃক ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছেন।

ইবনে সিনার যুক্তিবিদ্যার অবসান: আল ফারাবির অনুসরণে তিনিও উপলব্ধি করেন সত্যানুসন্ধানে যুক্তিবিদ্যার বিকল্প নেই। তিনি তার সকল রচনাবলির সূচনা করেছেন যুক্তি দিয়ে এবং যুক্তিবিদ্যাকে তিনি বিজ্ঞান ও গণিতের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর বলে মনে করেন। তিনি “আল ইশরাত” গ্রন্থে এবং “আল নাযাত” রচনায় যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যুক্তিবিদ্যাকে তিনি চিন্তনমূলক বিজ্ঞান হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তিনি যুক্তিবিদ্যার অন্তর্গত নিম্নোক্ত বিষয়াবলি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। যথা:

১. অস্তিত্ব: তিনি অস্তিত্বকে যৌক্তিক, জড়ীয় ও আধ্যাত্মিক এ তিন ভাগে ভাগ করেছেন। যুক্তিবিদ্যা এ যৌক্তিক অস্তিত্ব নিয়ে আলোচনা করে। গণিতের মতো যুক্তিবিদ্যায় বিমূর্ত বিষয়েরও আলোচনা করা হয়।

২. সংজ্ঞা: তিনি যুক্তিবিদ্যার অন্যতম আলোচ্যবিষয় হিসেবে সংজ্ঞা নিরূপণের কথা বলেন। ইবনে সিনার মতে সুষ্ঠু চিন্তা যথার্থ সংজ্ঞায়নের দ্বারা আরম্ভ করা উচিৎ। এতে চিন্তার ভুলভ্রান্তি দূর হয়। প্রতিটি সংজ্ঞা বস্তু বা বিষয়ের আবশ্যিক দিক নিয়ে আলোচনা করে বলে তা বর্ণনা থেকে পৃথক। তিনি সংজ্ঞায়নের উপর অধিক গুরুত্বারোপ করেন।

৩. বচন: ইবনে সিনা এরিস্টটলের মতে বলেন প্রতিটি বচনে দুটি পদ রয়েছে। যথা: উদ্দেশ্য ও বিধেয়। তিনি উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের মধ্যে পাঁচ প্রকার সম্বন্ধের কথা বলেন। যথা: জ্যাতি, প্রজাতি, বিভেদ লক্ষণ, উপলক্ষণ ও অবান্তর লক্ষণ।

৪. ন্যায় অনুমান বা সহানুমান: তিনি ন্যায়ানুমান বা সহানুমানের উপর জোর দেন। তাঁর মতে, যৌক্তিক কাঠামোর মূল হচ্ছে সহানুমান।

৫. বিশেষ ও সার্বিক: যুক্তি বিদ্যা হলো সাধারণ বা সার্বিক ধারণাবলির মানসিক সত্তা, এগুলোর বাস্তব সত্তা নেই। সার্বিকসমূহ বিশেষের পূর্ববর্তী। বিশেষকে বাদ দিয়ে সার্বিকসমূহ হচ্ছে শুধু মানসিক সত্তা। অর্থাৎ সার্বিক শুধু মানসিক জগতে বিরাজ করে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, আমরা বলতে পারি ইবনে সিনা যুক্তিবিদ্যাকে অন্য যে কোন বিদ্যা বা বিজ্ঞান অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর বলে মনে করেন। তিনি সকল বিষয়ের মধ্যে যুক্তির প্রাধান্য স্বীকার করেন। তিনি যুক্তিবিদ্যাকে চিন্তার নিয়ন্ত্রণমূলক সূত্র বা নীতির বিজ্ঞান হিসেবে বিবেচনা করেছেন। যুক্তিবিদ্যা মূলত নিয়মনীতি গঠন করে ভুল ভ্রান্তি পরিহার করে সত্য অর্জনের পথ নির্দেশ করে।