অথবা, ১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তির প্রেক্ষাপট আলোচনা কর।
উত্তর: ভূমিকা: পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো শাসনই চিরস্থায়ী নয়। যার শুরু আছে তার শেষও আছে। তবে কারো কারো শেষটা একটু দেরিতে হয়। ইতিহাসের ধর্ম হলো পরিবর্তন। ১৭৫৭সালের ২৩ জুন পলাশী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ব্রিটিশদের হাতে চলে যায়। প্রায় দুইশত বছর ইংরেজরা শোষণ-নিপীড়নের মাধ্যমে এ দেশ শাসন করে। ভারতীয় জনগণ ইংরেজ শাসনের শুরু থেকে তাদের এ নিপীড়নের প্রতিবাদ করে আসছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা কূট-কৌশলে সব আন্দোলন প্রতিরোধ করে দীর্ঘদিন শাসন করে। কিন্তু এই শাসনের ইতিতো একদিন টানতেই হবে। যারই প্রেক্ষাপটে ১৮৮৫ সালে কংগ্রেস ও ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা হলে ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন আরো জোরদার হয় এবং অবশেষে ১৯৪৭ সালে লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন এদেশের গভর্নর নিযুক্ত হলে ভারতীয়গণ তাকে চাপ সৃষ্টি করে। ফলে তিনি ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি দেশ গঠন করে ভারত বিভক্ত করেন। তবে এই বিভাগের পিছনে রয়েছে এক বড় ইতিহাস।
১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তির প্রেক্ষাপট: ১৯৪৭গালের ভারত বিভক্তির পিছনে অনেক কারণ বিদ্যমান ছিল। নিম্নে তা বর্ণনা করা হলো-
১. ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ: ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ ছিল প্রথম ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন। ভারতবর্ষে কোম্পানির শাসন যখন জনসাধারণের মনে অসন্তোষ সৃষ্টি করে তখনি ১৮৫৭ সালে এ বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। যদিও সঠিক নেতৃত্বের অভাবে এ আন্দোলন ব্যর্থ হয় তথাপি এ বিদ্রোহ ভারতবাসীর মনে নতুন চেতনা সঞ্চার করেছিল।
২. ১৮৮৫ সালে সর্বভারতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা: ভারতে ব্রিটিশ সরকার যখন শোষণ, নিপীড়নের চূড়ান্ত পর্যায়ে তখন ভারতীয় জনগণ ব্রিটিশদের প্রতিবাদ করার জন্য একটি সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। কারণ ভারতীয় জনগণ বুঝতে পেরেছিল সংগঠন ছাড়া আন্দোলন সফল হয় না। তাই ব্রিটিশ সিভিলিয়ান হিউম বড়লাট ডাফরিনের প্রেরণায় ১৮৮৫ সালে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। এই কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর ভারতীয় জনগণ কথা বলার মতো মাধ্যম খুঁজে পাই।
৩. আলীগড় আন্দোলন: স্যার সৈয়দ আহমেদ কর্তৃক আলীগড় আন্দোলন ভারতীয় উপমহাদেশে একটি আলোচিত ঘটনা। ভারতীয় কংগ্রেস প্রথমদিকে নিরপেক্ষ থাকলেও পরবর্তীতে তারা হিন্দুদের পক্ষপাতিত্ব করায় সৈয়দ আহমেদ মুসলমানদেরকে কংগ্রেস থেকে দূরে থাকতে বলেন। এই আন্দোলন মুসলমানদের মধ্যে সামাজিক, রাজনৈতিক ও জী অর্থনৈতিক অবনতির কথা তুলে ধরে তাদেরকে জাগ্রত করেন।
৪. বঙ্গভঙ্গ ও রদ: ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন প্রশাসনিক সুবিধার জন্য বঙ্গভঙ্গ করেন। বঙ্গভঙ্গে মুসলমানরা খুশি হলেও ভারতীয় কংগ্রেস তথা হিন্দুরা এর তীব্র সমালোচনা করেন। এক পর্যায়ে কংগ্রেস তীব্র সমালোচনা করে স্বদেশী আন্দোলন শুরু করে। পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকার বাধ্য হন বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে। ১৯১১ সালে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ রদ করলে মুসলমানরা আবার বঙ্গভঙ্গের তীব্র বিরোধিতা করে এবং ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। ফলে মুসলমানরা ব্রিটিশ শোষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে এবং আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যায়।
৫. মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা: ১৮৮৫ সালে সর্ব ভারতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা হলে হিন্দু-মুসলমানরা যৌথ উদ্যোগে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনা করত। কিন্তু কংগ্রেস নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেললে মুসলমানরা স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান গড়ার চিন্তা করে। এভাবে এক পর্যায়ে ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর নবাব স্যার সলিমুল্লাহ ঢাকায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এ মুসলিম লীগ কংগ্রেসের মতোই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার ছিল। ফলে বলা যায়, ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের ক্ষেত্রে মুসলিম লীগের যথেষ্ট অবদান লক্ষ করা যায়। স্বাধীন পাকিস্তানে সৃষ্টির জনক এই মুসলিম লীগ।
৬. মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইন: ১৯০৯ সালে ভারতবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে লর্ড মিন্টো তার নামে মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইন প্রবর্তন করেন। কিন্তু এ আইন ভারতবাসীর জন্য একটি নিপীড়নমূলক আইন হিসেবে প্রবর্তিত হয়। ফলে ভারতবাসীর মধ্যে অসন্তোষ বেড়ে যায়। তাই তারা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে। এই আন্দোলন এক সময় ভারত বিভক্তির পথ সুগম করেছিল।
৭. খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন: ভারতবর্ষের ইতিহাসে ১৯১৪ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের খিলাফত রক্ষা করার দাবিতে ভারতীয় মুসলমানরা এক আন্দোলনে নামে যা খিলাফত আন্দোলন নামে পরিচিত এবং ভারতের স্বরাজ প্রতিষ্ঠার জন্য মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। যদিও পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকারের দমনে এ আন্দোলন ব্যর্থ হয়। তথাপি খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন ভারতবাসীর মধ্যে প্রতিবাদের জান্ডা জাতীয়তাবোধের চেতনা সঞ্চার করেছিল যা একদিন ভারতবাসীকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল।
৮. ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন: ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন পাস ছিল ব্রিটিশ সরকারের আর এক শোষণের পন্থা। এ আইনের প্রতিবাদে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস সত্যাগ্রহ আন্দোলনের ডাক দেয়। এ আন্দোলনকে দমন করার জন্য ব্রিটিশ সরকার কুখ্যাত রাওলাট এ্যাক্ট প্রবর্তন করেন। ফলে ভারতবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ১৯২০ সালের ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগে এক সমাবেশের আয়োজন করে। কিন্তু ঐ সমাবেশে জেনারেলের নির্দেশে গুলি চালিয়ে শত শত লোককে হত্যা করে। এ ঘটনায় আন্দোলন আরো বেগবান হয়ে উঠে এবং অসহযোগ ও খিলাফল আন্দোলন ঐকমত্যে পৌঁছে আন্দোলন পরিচালনা করে। যদিও শেষ পর্যন্ত এ দুটো আন্দোলনই ব্যর্থ হয়। তথাপি এ আন্দোলন ভারত বিভক্তির দ্বার উন্মোচন করেছিল।
৯. ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন: ১৯৬৯ সালের মতো ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সরকার ভারতের শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানে এ আইন পাস করেন। কিন্তু এ আইনে যে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয় তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে ভারতীয় জনগণের মধ্যে অসন্তোষ আরো বেড়ে যায় এবং ধীরে ধীরে তারা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়।
১০. সাইমন কমিশন: ব্রিটিশ সরকার ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের ধারা মোতাবেক এ আইনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য ১০ বছর পর একটি কমিটি প্রেরণ করার কথা বলেন। কিন্তু ১০ বছর পূর্ণ না হতেই ব্রিটিশ স্বার্থে এ কমিশন ১৯২৭ সালে সাইমনের নেতৃত্বে ভারতে আসেন। কিন্তু এ কমিশনে কোনো ভারতীয় সদস্য না থাকায় ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ তা বর্জন করে আন্দোলনের ডাক দেন। কিন্তু ভারতীয়রা এই কমিশনকে বর্জন করলেও সাইমন কমিশন ভারত বিভক্তির পথকে অনেক সহজ করেছিল।
১১. জিন্নাহর চৌদ্দ দফা: মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯২৮ সালের নেহেরু রিপোর্টের উপর কিছু সংশোধনী আনয়ন করার প্রস্তাব দেন। তবে কংগ্রেস এ প্রস্তাব প্রত্যাখান করলে জিন্নাহ মুসলমানদের স্বার্থের কথা তুলে ধরে ১৪ দফা পেশ করেন। নেহেরু রিপোর্টে যেমন হিন্দুদের স্বার্থের কথা বলা হয়েছিল তেমনি জিন্নাহ এই রিপোর্টেও মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণের কথা বলেন। ফলে ভারতে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে গোলাযোগ সৃষ্টি হয় এবং ভারত বিভক্তির পথ সুগম হয়।
১২. গান্ধী-ডারউইন চুক্তি: ১৯৩১ সালের ৫ মার্চ ভাইসরস ডারউইন ও গান্ধীজীর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়
১৯৩০.১৯৩১.১৯৩২ সালে তারপর তিনটি গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এ বৈঠকে সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। ফলে ভারতীয়দের মধ্যে গণঅসন্তোষ আরো বেড়ে যায়।
১৩. ১৯৩৭ সালের নির্বাচন: ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন অনুযায়ী প্রদেশগুলোতে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়। ফলে এই প্রদেশগুলোতে ১৯৩৭ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মুসলিম লীগ ও কৃষকপ্রজা পার্টি কোয়ালিশন করে মন্ত্রিসভা গঠন করে। তবে এ মন্ত্রিসভা বেশিদিন শাসনকার্য চালাতে পারে না। ফলে ভারতবাসীর মাঝে ভারতের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার ইচ্ছা অনুভব করে।
১৪. লাহোর প্রস্তাব: ১৯৩৭ সালের প্রদেশগুলোর নির্বাচনে বাংলা প্রদেশের কৃষক পার্টির নেতা ফজলুল হক কংগ্রেসের সাথে কোয়ালিশন করে সরকার গঠন করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু কংগ্রেস তা প্রত্যাখ্যান করলে মুসলমানরা আলাদা একটি জাতি হিসেবে স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৪০ সালে লাহোরে মিলিত হয়। এই লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন একে ফজলুল হক, যা ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব নামে খ্যাত বলা হয়। ভারত বিভক্তির অন্যতম একটি কারণ এই লাহোর প্রস্তাব।
১৫. জিন্নাহের দ্বিজাতি তত্ত্ব: ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির ক্ষেত্রে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহের দ্বিজাতি তত্ত্ব খুবই প্রভাব ফেলে। ভারতবর্ষে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ঐকমতের অভাব দেখা দিলে জিন্নাহ তার বিখ্যাত দ্বিজাতি তত্ত্ব উপস্থাপন করেন। তিনি এই তত্ত্বে মুসলমানদের জন্য একটি আলাদা জাতি হিসেবে স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তাব দেন।
১৬. ক্রিপস মিশন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ভারত ব্রিটিশদের উপেক্ষা করে যাতে অন্য কোনো দেশকে সমর্থন না করে বা অন্য কোনো দেশ ভারতকে আক্রমণ না করে। এছাড়া ব্রিটিশ সরকারও ভারত সম্পর্কিত বিষয়ের মনোভাবের পরিবর্তন আনে। যার কারণে ব্রিটিশ সরকার ১৯৪২ সালে ভারতে একটি মিশন প্রেরণ করেন। এই মিশন ক্রিপস মিশন নামে পরিচিত। এই মিশন ভারতে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নেতাদের অনেক আলোচনা করে। কিন্তু দুই দল ঐকমত্যে আসতে ব্যর্থ হয়। ফলে ব্রিটিশ সরকার নিজস্ব পরিকল্পনা পেশ করেন। এই প্রস্তাবেও ভারত বিভক্তির আভাস পাওয়া যায়।
১৭. ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলন: ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতে জাপানি আক্রমণের ভীতি কাজ করে। এসময় ভারতীয় নেতারা বিশেষ করে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নেতারা ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব আরো সক্রিয় হয় এবং তারা অবিলম্বে ভারতের স্বার্থে ব্রিটিশ সরকারকে ভারত ত্যাগ করা উচিত বলে ঘোষণা দেয়। ভারতীয়রা আগস্ট প্রস্তাবের মাধ্যমে ব্রিটিশদের ভারত ছেড়ে যেতে বলেন। তবে ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে না গেলেও একদিন যে এদেশ ছেড়ে যেতে হবে সেটা তারা বুঝতে পেরেছিল।
১৮. ১৯৪৬ সালের নির্বাচন: ভারতবর্ষে ১৯৪৬ সালে প্রদেশগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে এতে কেন্দ্রীয় নির্বাচনের কথা থাকলেও তা অনুষ্ঠিত হয় নি। এই প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলিম লীগ শতকরা ৯৫% ভোট পেয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করে। যা ভারত বিভক্তি এবং মুসলমানদের জন্য পাকিস্তান সৃষ্টির ভিত্তি রচনা করেছিল।
১৯. মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা: ভারতে রাজনৈতিক অবস্থা সংকটপন্ন হলে ক্রিপস মিশনের মতোই ভারতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য ব্রিটিশ সরকার তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কেবিনেট মিশন প্রেরণ করেন। এই মিশন কংগ্রেস ও মুসলিম লীগকে নিয়ে আলোচনায় বসার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। তথাপি ১৯৪৬ সালের এই মিশন ও ভারত বিভক্তির ইঙ্গিত খুব জোরে সোরে প্রকাশ করেছিল।
২০. মাউন্ট ব্যাটেনের পরিকল্পনা: লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনকে ব্রিটিশ সরকার গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত করেন ভারতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য। ব্রিটিশরা যখন বুঝতে পেরেছিল, ভারতীয়দের মধ্যে গণসন্তোষের কারণে ভারতে ব্রিটিশ শাসনকার্য পরিচালনা করা আর সম্ভব নয়। মাউন্ট ব্যাটেন ১৯৪৭ সালের ৩ জুন তার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন। এই পরিকল্পনায় একটি সীমানা কমিশনও গঠন করা হয়। এই কমিশকে ভারত বিভক্তির পূর্বশর্ত বলে মনে করা হয়।
২১. ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন পাস: ব্রিটিশ সরকারের গভর্নর অবশেষে ১৯৪৭ সালে একটি আইন পাস করে। এই আইনের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি আলাদা সৃষ্টি হয়। লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনের এ ভারত বিভক্তির মাধ্যমে ভারতবাসীর দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের অবসান ঘটে।
উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার শেষ প্রান্তে বলা যায় যে, সৃষ্টি এবং ধ্বংস পৃথিবীর সহজাত প্রবৃত্তি। তেমনি ১৭৫৭সালে ব্রিটিশরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে প্রায় ২০০ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করে। এই বিদেশি শাসনকে ভারতীয়রা কখনো – স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। কিন্তু তাদের দুর্বল প্রতিবাদ আন্দোলনকে ব্রিটিশ সরকার খুব সহজেই দমন করে ক্ষমতাকে আরো – পাকাপোক্ত করেছিল। কিন্তু ভারতীয়দের সাথে নিপীড়ন, – অত্যাচারের চরম পর্যায়ে ব্রিটিশরা বুঝতে পারে যে, আর ভারতে ও থাকা তাদের পক্ষে অসম্ভব। তখনই ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির মাধ্যমে এদেশ ছেড়ে ব্রিটিশরা চলে যেতে বাধ্য হয়।