অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিস্তৃতি বর্ণনা কর।
অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু আলোচনা কর।
অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত? আলোচনা কর।
অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সীমানা বর্ণনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি বা বিষয়বস্তু বা সীমানা নির্ধারণ খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়বস্তু স্থির নয়, পরিবর্তনশীল। প্রকৃতপক্ষে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা ক্ষেত্রের সীমানা অতিমাত্রায় ব্যাপক। এজন্যই রোডি (Rodec) বলেন, “রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কোন সঠিক এবং সুনির্দিষ্ট সীমানা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি বা পরিসর বা বিষয়বস্তু: নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি বা বিষয়বস্তু সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
১. রাষ্ট্রচিন্তা বা রাষ্ট্রদর্শন: কোন কালের বা যুগের রাজনৈতিক চিন্তাধারার সমষ্টি হচ্ছে রাষ্ট্রচিন্তা বা রাষ্ট্রদর্শন। মূলত রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ এসব চিন্তাধারা বা ধ্যানধারণা উপস্থাপন করেছেন। সাধারণত রাষ্ট্রচিন্তা তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা: ১. প্রাচীন যুগের রাষ্ট্রচিন্তা ২. মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তা এবং ৩. আধুনিক যুগের রাষ্ট্রচিন্তা। প্রাচীনকালের সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল, মধ্যযুগের সেন্ট আগস্টিন, একুইনাস এবং আধুনিক যুগের ম্যাকিয়াভেলি, হবস, লক, রুশো, মিল, বেস্থাম, মার্কস, এঙ্গেল, লাস্তি প্রমুখের রাষ্ট্রচিন্তা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়ে থাকে।
২. রাজনৈতিক তত্ত্ব: বাষ্ট্রের বাস্তবসম্মত আলোচনাকে রাজনৈতিক তত্ত্ব বলা হয়। রাষ্ট্র, সরকার, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, সাম্য, আইন, অধিকার, কর্তব্য, জাতি, জাতীয়তা, জাতীয়তাবাদ আন্তর্জাতিকতাবাদ প্রভৃতি রাজনৈতিক তত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে স্বীকৃত। এগুলোর আলোচনা ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান অসমাপ্ত।
৩. রাজনৈতিক মতবাদ: রাজনৈতিক মতবাদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধিভূক্ত। রাষ্ট্রের, উৎপত্তি ও পরিচালনা সংক্রান্ত বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। যেমন- ঐশ্বরিক বা সৃষ্টিমূলক মতবাদ, বলপ্রয়োগ মতবাদ, বিবর্তনবাদ, কর্তৃত্ববাদ, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, সর্বাত্মকবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ প্রভৃতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত।
৪. রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান: রাষ্ট্রের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে কতকগুলো প্রতিষ্ঠান সক্রিয় থাকে। যেমন-সংবিধান, সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ, রাজনৈতিক দল, চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী, নেতৃত্ব, জনমত, নির্বাচকমণ্ডলী প্রভৃতি।
৫. প্রশাসনিক সংগঠন: সরকারকে গতিশীল ও সক্রিয় রাখে প্রশাসনিক সংগঠনসমূহ। লোকপ্রশাসন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রশাসনিক সংগঠন পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বিকেন্দ্রীকরণ, এলিট, আলাতন্ত্র প্রভৃতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত।
৬. রাজনৈতিক আচরণ: আচরণবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে আচরণ সংক্রান্ত বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করেছেন। একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জনগণের আচরণ, মনোভাব, দৃষ্টিভঙ্গি ও সংস্কৃতি রাজনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। বর্তমানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা করে।
৭. তুলনামূলক রাজনীতি : তুলনামূলক রাজনীতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধির অন্তর্ভুক্ত। পূর্বে শুধুমাত্র পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে তুলনা করা হতো। কিন্তু বর্তমানে প্রাচ্য, পাশ্চাত্য, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাজনীতির সাথে তুলনা করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে থাকে।
৮. আন্তর্জাতিক রাজনীতি: বিশ্বায়নের এ যুগে আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি নানাভাবে জাতীয় জীবনের উপর প্রভাব বিস্ত ার করে থাকে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি এসব প্রভাব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোকপাত করে। ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্তর্ভুক্ত বিষয়াদি যেমন-কূটনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, আন্তর্জাতিক বিরোধ, শাস্তি, দ্বন্দ্ব এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঘটনাবলির সবিস্তার আলোচনা করে।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্র বা পরিধি শুধু যে ব্যাপক তাই নয় বরং তা আরো দিনদিন ব্যাপকতর হচ্ছে। অনেকে বলেছেন, মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল কার্যকলাপই হলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি বা বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত।