অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বরূপ আলোচনা কর।
অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি আলোচনা কর।
অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বরূপ বর্ণনা কর।
অথবা, সংক্ষেপে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি বর্ণনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : সামাজিক বিজ্ঞানের একটি অন্যতম শাখা হলো রাষ্ট্রবিজ্ঞান (বিশ্বের আর্থসামাজিক রাজনৈতিক
ব্যবস্থার দ্রুত পরিবর্তনশীলতা ও অগ্রগতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতিতে প্রভাব ফেলছে। রাষ্ট্র যেমন বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন রূপ ধারণ করেছে তেমনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতিতেও সূচিত হয়েছে নানাবিধ পরিবর্তন। এর ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি নির্ণয় করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি বা স্বরূপ: একটি সুশৃঙ্খল বিজ্ঞান হিসেবে বর্তমানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের নিম্নে উল্লিখিত প্রকৃতিগুলো চিহ্নিত করা যায়:
১. আদর্শমুখী বিজ্ঞান: রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি আদর্শমুখী গতিশীল বিজ্ঞান। কেননা এটি রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে মানুষকে নিয়ে আলোচনা করে। এক্ষেত্রে ছকবাঁধা পদ্ধতি অনুসরণ করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হলেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি মেনে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করেন। এতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ আদর্শ ও মূল্যবোধ বিসর্জন দিতে চান না।
২. রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি অনেকটা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক। কেননা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান সংবিধান, সরকারি কাঠামো, রাজনৈতিক দল, চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী, এলিট, আমলাতন্ত্র ইত্যাদি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা করে। আর এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকার সঠিকভাবে পরিচালিত হয়।
৩. ক্ষমতাকেন্দ্রিক আলোচনা: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি ক্ষমতাকেন্দ্রিক। এজন্য বর্তমানে রাজনীতিকে ‘ক্ষমতার
রাজনীতি’ (Power Politics) বলা হয়। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ ক্ষমতাকেন্দ্রিক কার্যকলাপের বিশ্লেষণকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে Alan R. Ball বলেন, “Political Power is a key concept in the study
of politics.” রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রবার্ট ডাল রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে ক্ষমতা, শাসন ও কর্তৃত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করেছেন।।
৪. আইন প্রণয়ন: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি অন্যতম প্রতিপাদ্য বিষয় হলো আইন। সার্বভৌমত্বের নির্দেশকেই আইন হিসেবে গণ্য করা হয়। রাষ্ট্রের পক্ষেই সরকার আইন প্রণয়ন করে শাসনকার্য পরিচালনা ও শাস্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করে।
৫. নৈতিকতা: রাষ্ট্রবিজ্ঞান নৈতিকতা নির্ভর। রাষ্ট্রবিজ্ঞান কেবলমাত্র রাষ্ট্রের প্রকৃতি নিয়েই আলোচনা করে না সেই সাথে উচিত-অনুচিত, ভাল-মন্দ ইত্যাদি বিষয় নিয়েও পর্যালোচনা করে। ইহা মানুষের নৈতিক বিচারের প্রতি দৃষ্টিপাত করে।
৬. রাজনৈতিক আচরণের পর্যালোচনা: রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো মানুষের রাজনৈতিক আচরণের কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়। এটি মানুষের রাজনৈতিক আচরণ মূল্যায়ন করে। এর মাধ্যমে ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও দলের রাজনৈতিক আচার আচরণ বিশ্লেষণ করা হয়।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্র ও এর বিভিন্ন সংগঠন এবং রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপের বিশ্লেষণধর্মী পর্যালোচনাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতিভিত্তিক। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি সম্পর্কে অধ্যয়ন করলে রাষ্ট্রশাসন ও পরিচালনা করা সহজসাধ্য হয়।