অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের উপযোগী পদ্ধতি কোনটি?
অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি কোনটি?
অথবা, তোমার কাছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের উত্তম পদ্ধতি কোনটি? সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর: ভূমিকা: রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি গতিশীল সামাজিক বিজ্ঞান। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এর গতিপ্রকৃতিও পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রাচীন কাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নে বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসৃত হয়ে আসছে। এসব পদ্ধতির মধ্যে কোন পদ্ধতি বেশি উপযোগী, আবার কোনটি কম গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে এ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো:
রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের উপযুক্ত বা উত্তম পদ্ধতি: রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের উপযুক্ত পদ্ধতি নিয়ে দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। প্লেটো, রুশো, হেগেল, কান্টসহ অনেকের মতে দার্শনিক পদ্ধতি উত্তম। আবার এরিস্টটল ও লর্ড ব্রাইস রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নে ঐতিহাসিক ও পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির কথা বলেছেন। তাঁদের মতে, ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও মতবাদকে সার্থকভাবে মূল্যায়ন সম্ভব নয়। আর পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে অতীত, বর্তমান এবং দুটি দেশের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠনসমূহের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনার পর সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব। অন্যদিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লিপসন (Lipson) রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নে ঐতিহাসিক ও দার্শনিক পদ্ধতির সমন্বয়ের কথা প্রকাশ করেছেন। আবার অনেকে মনে করেন, ঐতিহাসিক ও তুলনামূলক পদ্ধতি এক সময় প্রাধান্য বিস্তার করেছিল এবং এখনও গুরুত্ব বজায় রেখেছে। অন্যদিকে, আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে বিশ্লেষণকারীগণ রাজনীতির আলোচনাকে বাস্তবধর্মী করেছেন। রাজনীতির আলোচনায় তত্ত্ব ও গবেষণাকে সমান স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং অন্যান্য শাস্ত্রের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার ভিত্তিতে রাজনীতির আলোচনাকে সমাজমুখী ও প্রগতিশীল করেছেন সন্দেহ নেই। সুতরাং একথা বলা যায়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতিই এককভাবে যথেষ্ট উপযোগী বা উত্তম নয়।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের প্রত্যেকটি পদ্ধতিই কোন না কোন দিক থেকে বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সে পদ্ধতিই বেশি প্রযোজ্য যে পদ্ধতি বিশেষ সময় ও গবেষণার বিশেষ বিষয়ে সহায়ক। তবে সার্বিক দিক বিবেচনা করে বলা যায়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের সনাতন পদ্ধতির মধ্যে ঐতিহাসিক, তুলনামূলক ও পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিই সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত বা উত্তম।