অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির মধ্যকার বৈসাদৃশ্যসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে ব্যবধান আলোচনা কর।
অথবা, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে তুলনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা: যদিও রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান। তারপরও সংজ্ঞা, পরিধি কার্যাবলি প্রভৃতি ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম পার্থক্য বিদ্যমান। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি দু’টি পৃথক বিষয়। এ দুটি বিষয়ের মধ্যে বিষয়ভিত্তিক পার্থক্য অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যমান। যা দুটি বিষয়ের মধ্যে আলাদা বৈশিষ্ট্যের সৃষ্টি করেছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য: উভয়ের সংজ্ঞা, বিষয়বস্তু, কার্যপদ্ধতি, অবকাঠামো পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, গতিপ্রকৃতি, পরিধি বিশ্লেষণ করলে নিম্নোক্ত পার্থক্যগুলো লক্ষ্য করা যায়:
১. সংজ্ঞাগত পার্থক্য: অর্থনীতি হলো এমন একটি বিদ্যা যে বিদ্যা সর্বদা মানুষের অর্থনৈতিক চাহিদা মেটানোর কাজে বাস্ত। অন্যদিকে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান মানুষের রাজনৈতিক আচরণ বিশ্লেষণ অর্থাৎ অর্থনীতি অর্থ সম্পর্কিত বিষয়াদি এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয়াদি আলোচনা করে।
২. পরিধি: পরিধিগত দিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি একক অর্থে অর্থনীতি অপেক্ষা ব্যাপকতর। কারণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রাষ্ট্র পরিচালনার যাবতীয় বিষয়াদি এমনকি দেশের জাতীয় বাজেটের বিষয়টিও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি কর্তৃক নির্ধারিত। সুতরাং রাষ্ট্রবিজ্ঞান অর্থনীতির উপরও প্রভাব বিস্তারে সক্ষম। কিন্তু অর্থনীতি যেহেতু মানুষের অর্থনৈতিক বিষয়াদি, অর্থাৎ মানুষের চাহিদা, সম্পত্তি ও সম্পদ সম্পর্কিত বিষয়াদি বিশ্লেষণ করে তাই এর পরিধি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তুলনায় সংকীর্ণ।
৩. গতিপ্রকৃতি: রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমাজবাসীর রাজনৈতিক জীবনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলোকপাত করে। কিন্তু অর্থনীতির আলোচনা হলো সমাজবদ্ধ মানুষের অর্থনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টার বিচার বিশ্লেষণ।
৪. কার্যাবলি: মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলির আলোচনা হলো অর্থবিদ্যা। সীমাবদ্ধ উপায় উপকরণের দ্বারা সীমাহীন অভাব মেটানোর প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করেই মানুষের যাবতীয় অর্থনৈতিক কার্যকলাপের সূত্রপাত ঘটে। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো একটি নীতিনিষ্ঠ বিজ্ঞান। এ যুগের কিছু রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলোচনাকে জ্ঞাননিষ্ঠ ও বস্তুনিষ্ঠ বলে দাবি করলেও রাষ্ট্রবিজ্ঞান নীতিনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে স্বীকৃতি পায়। অর্থাৎ রাষ্ট্রবিজ্ঞান মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধের উপর গুরুত্বারোপ করে।
৫. ভবিষ্যদ্বাণী: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভবিষ্যদ্বাণী করার কোন ক্ষমতা নেই। কারণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সংখ্যাতত্ত্বের বিষয়টি খাটে না। কিন্তু অর্থনীতি পাবে। কারণ অর্থনীতির সিদ্ধান্তসমূহ আধকাংশ ক্ষেত্রে সংখ্যাতত্ত্বের বৈজ্ঞানিক ভাষায় প্রকাশিত হয়। তাই সঠিক বিজ্ঞান হিসেবে ধনবিজ্ঞানের দাবি রাষ্ট্রবিজ্ঞান অপেক্ষা জোরালো।
৬. বিষয়বস্তু: অর্থনীতিবিদ Ivor Brown বিষয়বস্তুগত পার্থক্য করতে গিয়ে বলেছেন, অর্থনীতি, আলোচনা করে বিষয়-সম্পত্তিকে নিয়ে, অন্যদিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা রাজনীতি আলোচনা করে মানুষকে নিয়ে।
৭. সমস্যার সমাধান: অর্থ বিজ্ঞানীরা কেবল অর্থনৈতিক সূত্রাদি নির্দেশ করেন ও বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সূত্রগুলোর কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করে থাকেন। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা রাষ্ট্র সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা সম্পর্কে সামগ্রিকভাবে চিন্তাভাবনা করেন। এ কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা ক্ষেত্র অধিকতর বিস্তৃত।
৮. নীতিগত: নীতিগত দিক থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অর্থনীতির আলোচনা মূল্যমান নিরপেক্ষ। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা মূল্যমান নিরপেক্ষ নয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, উভয়ের মধ্যে মৌলিক কিছু পার্থক্য থাকলে এদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। উভয়েই বিশেষভাবে সমাজব্যবস্থা ও রাষ্ট্রব্যবস্থাসহ জনগণের পক্ষে কথা বলে। তবে উভয়ের মধ্যে বিষয়ভিত্তিক পার্থক্য বা বৈসাদৃশ্য অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যমান।