অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের গুরুত্ব বর্ণনা কর।
অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের উপযোগিতা আলোচনা কর।
অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব আলোচনা কর।
অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা: মানুষ সামাজিক জীব। সমাজজীবন বিশ্লেষণের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ তথা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উৎপত্তি। রাষ্ট্রের অন্যতম অঙ্গ হিসেবে নাগরিকের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বর্তমান। নাগরিকের এ রাজনৈতিক অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। তাই সামাজিক এবং রাজনৈতিক জীব হিসেবে প্রত্যেক মানুষের জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কীয় জ্ঞান আবশ্যক। একজন মানুষ তখনই পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে, যখন সে সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে পারে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা/গুরুত্ব: রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিজ্ঞান। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা প্রতিটি নাগরিকেরই একান্ত প্রয়োজন। নিম্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের বা অধ্যয়নের গুরুত্ব বা উপযোগিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. সুনাগরিক হওয়ার জন্য: রাষ্ট্রে প্রতিটি নাগরিকের কতকগুলো অধিকার ও কর্তব্য রয়েছে। অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা এবং কর্তব্য পালনের মাধ্যমে সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নতি সাধিত হয়। বলাবাহুল্য যে, অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন নাগরিকই রাষ্ট্রের সুনাগরিক। নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে হলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ করা অত্যন্ত জরুরি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞান ছাড়া রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধন করা সম্ভব নয়।
২. সচেতন নাগরিক হওয়ার জন্য: বর্তমান বিশ্বে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে সর্বোৎকৃষ্ট শাসনব্যবস্থা বলে বিবেচনা করা হয়। গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের শাসন। কেননা গণতন্ত্রে জনমতের প্রাধান্য রয়েছে। তাই জনগণকে শাসনের দায়িত্ব নিতে হলে তাদেরকে অবশ্যই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
৩. রাজনৈতিক চেতনা লাভের জন্য: আধুনিক রাষ্ট্রসমূহ কমবেশি গণতান্ত্রিক। জনমতকে উপেক্ষা করে সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারে না। গণতন্ত্র, জনমত, সরকার, রাষ্ট্র, সংবিধান প্রভৃতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচ্যবিষয়। উল্লিখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা জনগণকে রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ ছাড়া রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন নাগরিকের কথা কল্পনাই করা যায় না।
৪. ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞান মানুষের মানবিক গুণাবলিকে বিকশিত করে এবং ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়তা করে। ব্যক্তিত্ব নাগরিক জীবনকে মর্যাদা এনে দেয়, এমনকি ব্যক্তিত্ব ছাড়া যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে উঠতে পারে না। সুতরাং নাগরিকের ব্যক্তিত্ব বিকাশের লক্ষ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ অপরিহার্য।
৫. জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর জন্য: মানুষ যেহেতু রাজনৈতিক জীব এবং রাষ্ট্রে বসবাস করে, তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞান অপরিহার্য। রাষ্ট্রবিজ্ঞান মানুষের জ্ঞানের পরিধি বাড়িয়ে দেয়। এ বিস্তৃত জ্ঞান মানুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক কল্যাণই শুধু নয়, রাষ্ট্রের সার্বিক মঙ্গল আনয়নে সহায়তা করে।
৬. অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে: আধুনিককালে মৌলিক অর্থনৈতিক কার্যাবলি রাষ্ট্র সম্পাদন করে থাকে। যেমন- বার্ষিক বাজেট প্রণয়ন এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। বলাবাহুল্য যে, মানুষের রাষ্ট্রীয় জীবন অর্থনীতির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। তাই জনকল্যাণ সাধন তথা অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সমৃদ্ধি আনয়নের জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।
৭. অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে জ্ঞান: রাষ্ট্রবিজ্ঞান হচ্ছে নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য এর প্রধান আলোচ্যবিষয়। একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের কি কি অধিকার রয়েছে এবং কি কি কর্তব্য রয়েছে সে সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ করা একান্ত আবশ্যক।
৮. সামাজিক সমস্যা দূর করার জন্য: মানুষ সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব। সমাজ ও রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে ব্যক্তি তার অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ এবং সামাজিক সমস্যাদি সমাধান করার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানে জ্ঞানের কোন বিকল্প নেই। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ করা অপরিহার্য।
৯. দেশপ্রেম বৃদ্ধির জন্য : দেশপ্রেম আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকের অন্যতম গুণ। দেশপ্রেমিক নাগরিকরাই দেশের প্রকৃত সম্পদ। রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হয়। তাই দেশ ও জাতির স্বার্থে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ করা একান্ত প্রয়োজন।
১০. গণতন্ত্র কায়েমের জন্য: আধুনিক গণতান্ত্রিক বিশ্ব শাসনব্যবস্থায় গণতন্ত্র হলো সর্বোৎকৃষ্ট শাসনব্যবস্থা। তাই গণতন্ত্রকে বাস্তব রূপ দেয়ার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞান প্রয়োজনীয়। কারণ এ রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে বাস্তব রূপ দেয়া সম্ভব।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞান মানুষকে সুখী, সমৃদ্ধশালী, সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনে সহায়তা করে। এ জ্ঞান মানুষকে রাজনৈতিক ও উদার হওয়ার মনোভাবের শিক্ষা দেয়, ফলে ব্যক্তির সকল সংকীর্ণতা দূর হয় এবং মানবিক গুণাবলি বিকশিত ও সমৃদ্ধশালী হয়। সুতরাং ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভের জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের উপকারিতা ও গুরুত্ব অনস্বীকার্য।