রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিবর্তনমূলক মতবাদটি বিশ্লেষণ কর।

অথবা, রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত সঠিক মতবাদটি সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

অথবা, রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত ঐতিহাসিক মতবাদ সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে ঐতিহাসিক মতবাদ আলোচনা কর।

অথবা, রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে বিবর্তনমূলক মতবাদ আলোচনা কর।

উত্তর: ভূমিকা রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত যেসব মতবাদ আছে তার মধ্যে ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদ সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞানসম্মত এবং অধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি মতবাদী।

ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদ: রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদসমূহের মধ্যে ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এবং বিজ্ঞানসম্মত। আধুনিক কালে তাই এ মতবাদই সর্বজনস্বীকৃত) যদিও উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে অদ্যাবধি রাষ্ট্রের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে তা নির্ধারিত হয় নি, তথাপি আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ এ বিষয়ে একমত যে, রাষ্ট্র ঐতিহাসিক বিবর্তনেরই অব্যবহিত ফল। রাষ্ট্র বিধাতা কর্তৃক হঠাৎ একদিনে সৃষ্ট হয় নি, এটা বলপ্রয়োগের মাধ্যমেও সৃষ্ট হয় নি, এটা মানুষের চুক্তির ফলও নয়। রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে সকল কাল্পনিক মতবাদই বর্তমানে বর্জিত হয়েছে। (অধ্যাপক গার্নার (Prof. Garner) তাই যথার্থই লিখেছেন, ‘রাষ্ট্র বিধাতার অমোঘ সৃষ্টি নয়, এটা দৈহিক বলপ্রয়োগের ফলশ্রুতিও নয়, কোন প্রস্তাব বা সম্মেলন হতেও এটার সৃষ্টি হয় নি, এমনকি পরিবারের সম্প্রসারণের মধ্য দিয়েও এটার জন্ম হয় নি।” ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে।

ঐতিহাসিক মতবাদের সমালোচনা: নিম্নে এ মতবাদের সমালোচনা উল্লেখ করা হলো:

i এ মতবাদ অস্পষ্টতার দোষে দুষ্ট। বিবর্তনমূলক মতবাদে রাষ্ট্রের উৎপত্তির কথা বলা হয়েছে।

ii. বিবর্তনমূলক মতবাদটি অসম্পূর্ণতা দোষে দুষ্ট। এ মতবাদের সমর্থকদের মতে ব্যক্তি সম্পত্তি ও রাজনৈতিক চেতনার ফলে রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে।

iii. এ মতবাদ অনেকটা প্রগতি ও শাস্তির পরিপন্থি। বিবর্তনমূলক মতবাদের একটি স্তর হচ্ছে যুদ্ধবিগ্রহ।

iv. এ মতবাদে রাষ্ট্র কখন সৃষ্টি হয়েছে তার কোন স্পষ্ট প্রমাণ নেই। শুধু জানা যায় কিভাবে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রের বিবর্তনে একাধিক উপাদান কাজ করেছে। এক্ষেত্রে রক্তের সম্পর্ক, অর্থনৈতিক প্রয়োজন, যুদ্ধবিগ্রহ, ধর্ম ও রাজনৈতিক চেতনা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। এসব উপাদান পরস্পর পৃথক বা স্বতন্ত্র নয়। বস্তুত তাদের মিশ্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই রাষ্ট্রের উৎপত্তি ঘটেছে। সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রয়োজনের তাগিদে সমাজজীবনের রূপান্তর ঘটেছে এবং এ রূপান্তরের মধ্য দিয়েই আধুনিক রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে। এ রূপান্তর কারও চেষ্টা বা পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটে নি। এ রূপান্তর মূলত স্বতঃস্ফূর্ত।