রাষ্ট্রের কার্যাবলি আলোচনা কর।

অথবা, রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো বর্ণনা কর।

অথবা, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কার্যসমূহ বর্ণনা কর।

উত্তরঃ ভূমিকা: রাষ্ট্র হচ্ছে সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল বলেছেন, “মানুষ স্বভাবতই সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব।” তাই মানুষের প্রয়োজনেই রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছে। কি
মানুষের প্রয়োজনেই রাষ্ট্রকে বহুবিদ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়। কিন্তু রাষ্ট্রের কি কি কাজ করা উচিত। কিংবা রাষ্ট্র কি কার্যাবলি সম্পাদন করবে তা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে।

রাষ্ট্রের কার্যাবলি বা দায়িত্ব কর্তব্য: রাষ্ট্রের কার্যাবলি ও দায়িত্ব কর্তব্য নিয়ে মতভেদ থাকলেও কিছু কিছু কার্যাবলি সম্পাদন করা রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য। নিম্নে রাষ্ট্রের প্রধান প্রধান কার্যাবলিসমূহ আলোচনা করা হলো:

১. দেশরক্ষা: রাষ্ট্রের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে দেশরক্ষা তথা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্র গড়ে তোলে দক্ষ ও শক্তিশালী সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনী। স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীর সমন্বয়ে প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তোলা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। এছাড়া সমরাস্ত্র তৈরি, ক্রয়, সামরিক পরিকল্পনা, সামরিক জোট গঠন এবং প্রতিরক্ষা অবকাঠামো গড়ে তোলাও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

২. অভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা: রাষ্ট্রের আরেকটি অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করা। এজন্য রাষ্ট্র শক্তিশালী পুলিশ ও আনসার বাহিনী গঠন করে থাকে। এদের জন্য বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ক্রয় ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে।

৩. সার্বভৌমত্ব রক্ষা: রাষ্ট্রের একটি অপরিহার্য কাজ হলো সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। সার্বভৌমত্ব অর্জন না করলে যেমন রাষ্ট্র গঠিত হয় না, তেমনি সার্বভৌমত্ব হারালেও রাষ্ট্র বিলুপ্ত হয়। তাই রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।

৪. অন্য রাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা: আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য বিদেশে রাষ্ট্রদূত প্রেরণ ও অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা রাষ্ট্রের কর্তব্য। এ উদ্দেশ্যে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন ও বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদন করা রাষ্ট্রের অন্যতম কর্তব্য।

৫. শাসনকার্য পরিচালনা: রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনা আইন বিভাগ প্রদত্ত আইন দ্বারা শাসন বিভাগ গঠন করতে হয়। তাছাড়া সঠিকভাবে শাসনকার্য পরিচালনার জন্য সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন, কর্মচারী নিয়োগ করা এবং তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের অন্যতম কর্তব্য।

৬. আইন প্রণয়ন: রাষ্ট্রের একটি অন্যতম দায়িত্ব হলো আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। আইন প্রণয়ন, সংশোধন ও বাতিল করার জন্য রাষ্ট্রকে আইন বিভাগ গঠন করতে হয়।

৭. বিচার কার্য সম্পাদন: ন্যায় বিচারের স্বার্থে রাষ্ট্রকে বিচার বিভাগ গঠন এবং সৎ ও দক্ষ বিচারক নিয়োগ করতে হয়। কেননা নাগরিকদের সুবিচার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ।

৮. অধিকার সংরক্ষণ: রাষ্ট্রের একটি অপরিহার্য কাজ হলো নাগরিকের অধিকার রক্ষা করা। নাগরিকের এ অধিকারগুলো তাদের জীবন বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৯. অন্যান্য কার্যাবলি: উপর্যুক্ত কার্যাবলি ছাড়াও অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, জীবন ও সম্পদ রক্ষা, কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য সংক্রান্ত কার্য, যোগাযোগও জনহিতকর কার্যাবলি ও রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, রাষ্ট্রের কার্যাবলি অত্যধিক ব্যাপক। জনগণের সামগ্রিক কল্যাণসাধন করাই রাষ্ট্রের গুরুদায়িত্ব।