রোহিলা যুদ্ধ সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, রোহিলা যুদ্ধ সম্পর্কে কী জান?

অথবা, রোহিলা যুদ্ধ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

অথবা, রোহিলা যুদ্ধের আলোকে একটি টীকা লিখ।

উত্তর: ভূমিকা: দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে রোহিলা যুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। অযোধ্যার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত রোহিলাখণ্ডে প্রাধান্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মারাঠা শক্তি ও সুজাউদ্দৌলার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিযোগিতা চলে। এমতাবস্থায় ওয়ারেন হেস্টিংসের সাথে নবাব সুজাউদ্দৌলা মিত্রতা স্থাপন করে যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটান।

১. রোহিলাখণ্ডের অবস্থান: রোহিলাখণ্ড ছিল অযোধ্যার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত একটি প্রদেশ। হাফিজ রহমত খাঁ নামক একজন আফগান সর্দার এই প্রদেশ স্বাধীনভাবে শাসন করতেন।

২. রোহিলা ও মারাঠাদের দ্বন্দ্ব: এ সময় রোহিলারা মারাঠাদের পুনঃপুনঃ আক্রমণে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। রোহিলা নেতা হাফিজ রহমত খাঁ মারাঠাদের আক্রমণের ভয়ে অযোধ্যার নবাবের সাহায্যপ্রার্থী হন।

৩. রোহিলা ও মারাঠাদের মধ্যে চুক্তি: ১৭৭২ সালে অযোধ্যার নবাব এবং হাফিজ রহমত খাঁ ইংরেজ সেনাপতি স্যার আর্নেস্ট বার্কারের উপস্থিতিতে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির দ্বারা স্থির হয় যে, মারাঠারা রোহিলাখণ্ড আক্রমণ করলে নবাব সৈন্য দিয়ে রোহিলাখণ্ড সমর্থনপুষ্ট হয়ে রোহিলাখণ্ডের সাহায্যার্থে অগ্রসর হন।

৪. প্রথম রোহিলা যুদ্ধ সংঘটিত: শক্তিশালী মারাঠাগণ ১৭৭১ সালে সম্রাট শাহ আলমকে দিলীর সিংহাসনে স্থাপন করে রোহিলাখণ্ড আক্রমণ করলে রোহিলা সর্দার জবিতা খান পরাজিত হয়ে সুজা-উদ-দৌলার রাজ্য অযোধ্যায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি অযোধ্যার নবাবের সাথে ৪০ লক্ষ টাকা প্রদানের বিনিময়ে সামরিক সাহায্যের আশ্বাস লাভ করেন।

৫. দ্বিতীয়বার আক্রমণ: ১৭৭৩ সালে মারাঠাগণ দ্বিতীয়বার রোহিলাখণ্ড আক্রমণ করলে নবাব এবং রোহিলাখণ্ডের সম্মিলিত বাহিনীর আক্রমণে মারাঠগণ পরাজয় বরণ করে। কিন্তু প্রতিশ্রুত টাকা প্রদানে ব্যর্থ হলে অযোধ্যার নবাব ৪০ লক্ষ টাকা কোম্পানিকে প্রদানের অঙ্গীকারে কোম্পানির প্রদত্ত সেনাবাহিনীর সাহায্যে রোহিলখণ্ড অধিকার করেন। এভাবে অযোধ্যায় বৃটিশ হস্তক্ষেপের ফলে রোহিলাগণ বিপদগ্রস্ত হয়। হেস্টিংসের এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পরবর্তীকালে তাকে মহা অভিযোগের সম্মুখীন হতে হয়।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, রোহিলানেতা ১৭৭২ সালে সুজা-উদ-দৌলার সহায়তায় মারাঠাদের বিতাড়িত করে রোহিলাখণ্ড মারাঠা মুক্ত করেছিলেন। কিন্তু মারাঠাগণ উত্তর ভারত ছেড়ে চলে গেলে ঐ সুযোগে সুজাউদ্দৌলা হেস্টিংসের সহায়তায় রোহিলাখণ্ড দখল করেন। যুদ্ধে রোহিলা নেতা পরাজিত ও নিহত হন। এ যুদ্ধে ইংরেজ সেনাবাহিনীকে ভাড়াটে হিসেবে ব্যবহার করার জন্য ওয়ারেল হেস্টিংস নানাভাবে স্বদেশে সমালোচিত হয়। এমনকি ওয়ারেন হেস্টিংসের বিচারকালে রোহিলা যুদ্ধে ইংরেজ সৈন্যকে ভাড়া দেওয়ার বিষয়টিও গুরুত্ব পায়।