অথবা, লক্ষ্মৌ চুক্তির বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে লিখ।
অথব, লক্ষ্মৌ চুক্তির বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি? সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
অথবা, লক্ষ্মৌ চুক্তির ধারাগুলি বিশ্লেষণ কর।
ভূমিকা: ভারত উপমহাদেশের সাংবিধানিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে ১৯১৬ সালের লক্ষ্মৌ চুক্তি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ১৯১৬ সালে বোম্বাই অধিবেশনে সমঝোতার ওপর ভিত্তি করে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিই লক্ষ্মৌ চুক্তি নামে খ্যাত।
লক্ষ্মৌ চুক্তির বৈশিষ্ট্য : নিচে লক্ষ্মৌ চুক্তির বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো:
১. স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার দাবি: লক্ষ্মৌ চুক্তি প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সমঝোতায় উপনীত হয়। মুসলিম লীগ কংগ্রেসের সাথে একত্রে ভারতে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার দাবি করবে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
২. কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে মুসলমানদের আসন সংখ্যা নির্ধারণ: কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে নির্বাচিত আসনের এক-তৃতীয়াংশ মুসলমানরা লাভ করবে বলে লক্ষ্মৌ চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়।
৩. পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা: প্রাদেশিক আইন পরিষদে মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা জাতীয় কংগ্রেস স্বীকার করে নেয়।
৪. প্রদেশে মুসলমানদের আসন সংখ্যা নির্ধারণ : যে প্রদেশে মুসলমানরা সংখ্যালঘু যে প্রদেশে তারা সংখ্যার অনুপাতের চেয়ে বেশি আসন পাবে এবং যে প্রদেশে মুসলমানরা সংখ্যাগুরু সে
সকল প্রদেশে আনুপাতিক হারে কম আসন লাভ করবে।
৫. সম্প্রদায়গত আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা নির্ধারণ: কোনো আইন পরিষদে কোনো সম্প্রদায়ের তিন-চতুর্থাংশ সদস্যের বিরোধিতার মুখে
সে সম্প্রদায়ের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো আইন প্রণীত হবে না।
৬. কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের ক্ষমতা হ্রাস: যুদ্ধ ঘোষণা, শান্তি স্থাপন এবং চুক্তি সম্পাদনসহ ভারতের সামরিক নীতি, পররাষ্ট্রনীতি এবং রাজনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপারে ভারত সরকারের পরিচালন ক্ষমতায় কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা থাকবে না।
৭. ভারত সচিবের সম্পর্ক নির্ধারণ: ডোমিনিয়ন সরকারসমূহের সাথে ব্রিটিশ সরকারের উপনিবেশ মন্ত্রীর যে সম্পর্ক ভারত সরকারের সাথে ভারত সচিবের সম্পর্ক হতে হবে অণুরূপ।
৮. প্রাদেশিক পরিষদকে ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা: লক্ষ্মৌ চুক্তির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য এই যে, এতে প্রাদেশিক স্তরে পরিষদগুলোকে ঢেলে সাজাবার ব্যবস্থা করা হয়। পরিষদগুলোর এক-পঞ্চমাংশ সদস্য হবেন মনোনীত এবং চার-পঞ্চমাংশ সদস্য হবেন নির্বাচিত। বৃহৎ প্রদেশে সদস্য সংখ্যা ১২৫ জনের কম হবে না, ছোট প্রদেশে এ সংখ্যা হবে ৫০ থেকে ৭৫ এর মধ্যে। মনোনীত সদস্য ব্যতীত বাকি সব সদস্যই হবেন জনগণের ভোটে নির্বাচিত এবং ভোটারদের সংখ্যা যথাসম্ভব বৃদ্ধি করা লক্ষ্ণৌচুক্তির মাধ্যমে নির্ধারিত করা হয়।
৯. হিন্দু-মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠা : এ চুক্তির অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো হিন্দু-মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠা। এ ঐক্য সাধন প্রক্রিয়া বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও জাতিতে বিভক্ত। ভারতবর্ষকে এক নতুন জাতিসত্তায় বিকশিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, প্রকৃতপক্ষে লক্ষ্মৌ চুক্তির মাধ্যমে উত্থাপিত দায়িত্বশীল স্বায়ত্তশাসনের দাবিই মুসলমানদেরকে সর্বপ্রথম ব্রিটিশ সরকারের মুখোমুখি উপস্থাপিত করে। পরবর্তীকালে মুসলিম লীগ দলীয় সংখ্যা পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে দলের মূল উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে। বলা বাহুল্য, লক্ষ্ণৌ চুক্তির মাধ্যমেই সর্বপ্রথম মুসলমানগণ কংগ্রেসের নিকট থেকে তাদের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক অস্তিত্বের স্বীকৃতি লাভ করে।