লর্ড কর্নওয়ালিশের আমলে কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের অবস্থা লিখ।

অথবা, লর্ড কর্নওয়ালিশের সচিবালয়ের অবস্থা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর।

অথবা, লর্ড কর্নওয়ালিশের আমলে মূল সচিবালয়ের অবস্থা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তর: ভূমিকা: জনহিতৈষী এবং প্রভাবশালী কর্নওয়ালিশ স্বীয় কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও কর্মদক্ষতার দ্বারা এক সুসংহত শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছেন। এই সময় কলকাতা ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের রাজধানী। তাই কলকাতায় একটি কেন্দ্রীয় সেক্রেটারিয়েট বা সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর দুইটি বিভাগ ছিল। প্রথম, পাবলিক ডিপার্টমেন্ট, দ্বিতীয়ত, সিক্রেট ডিপার্টমেন্ট।

কর্নওয়ালিশের আমলে কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের অবস্থা: নিম্নে কর্নওয়ালিশের আমলে কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. আন্তঃবিভাগের অবস্থা: হেস্টিংসের সময়কালে সেক্রেটারিয়েট অতি দ্রুত বৃদ্ধি পেলে এর কাঠামোতে দুর্বলতা লক্ষ্য করা যায়। অনেক সময় দেখা যায়, আন্তঃবিভাগীয় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হলে তা বিশেষ কোনো বিভাগের সেক্রেটারির পক্ষে উত্তর দেওয়া বা আদেশ গ্রহণ করা ছিল অসাধ্য ও অসংগত। ফলে বিভাগগুলোর মধ্যে দেখা যায় সমন্বয়হীনতা।

২. পীটস ইন্ডিয়া অ্যাক্টের নির্দেশ: এ ধরনের অসুবিধা দূর করার জন্য পীটস ইন্ডিয়া অ্যাক্টের সংশোধিত আইনে গভর্নর জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয় একজন চিফ সেক্রেটারি নিয়োগ করার জন্য, যার দায়িত্ব হবে আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয় সাধন করা।

৩. চিফ সেক্রেটারির কাজ : চিফ সেক্রেটারির কাজ হলো কোর্টকে কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যবিবরণী পাঠানো, কোর্টের কার্যবিবরণী গ্রহণ করা এবং প্রাসঙ্গিক বিভাগে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিলিবণ্টন করা।

৪. সেক্রেটারি জেনারেল নিয়োগ : এ নির্দেশ অনুযায়ী পাবলিক রেভিনিউ ও সিক্রেট ডিপার্টমেন্টের জন্য একজন সেক্রেটারি জেনারেল নিযুক্ত করা হয়। সেক্রেটারি জেনারেলের আদেশে কাজ করার জন্য সেক্রেটারির পরিবর্তে প্রতিটি বিভাগে একজন করে সাব-সেক্রেটারি নিযুক্ত করা হয়।

৫. বিচার-বিভাগীয় সংস্কার: সেক্রেটারিয়েটের বিকাশে লর্ড
কর্নওয়ালিশের বিশেষ অবদান ছিল বিচার বিভাগের সংস্কার। ও ইতিপূর্বে বিচার বিভাগ প্রশাসনের সাথে যুক্ত ছিল। এর ফলে – জেলা কালেক্টর ছিলেন একাধারে শাসক ও বিচারক। কিন্তু । আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কর্নওয়ালিশ ১৭৯৩ সালে বিচার । বিভাগের নামকরণ করেন জুডিশিয়াল ডিপার্টমেন্ট। এ বিভাগের দেওয়ানি ও নিজামত নামে দুটি শাখা ছিল।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, কোম্পানি শাসকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালনার জন্য হেস্টিংস যে কেন্দ্রীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করেন তা কর্নওয়ালিশের সময়ে বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে সরকার ও জনগণের কল্যাণে অসামান্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছিল। পরবর্তীতে কর্নওয়ালিশের সময় সেক্রেটারিয়েট ব্যবস্থা কাঠামোগত পূর্ণতা লাভ করেছিল।