লর্ড কর্নওয়ালিশের জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, লর্ড কর্নওয়ালিশের জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, লর্ড কর্নওয়ালিশের জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে তুমার মতামত ব্যক্ত কর।

উত্তর : ভূমিকা: জনহিতৈষী এবং প্রভাবশালী কর্নওয়ালিশ স্বীয় কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও কর্মদক্ষতার দ্বারা এক সুসংহত শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছেন। আধুনিক ভারতীয় শাসনব্যবস্থার গোড়াপত্তন করেন তিনিই। বলা হয়ে থাকে যে, কর্নওয়ালিশই সর্বপ্রথম ভারতীয় সংবিধান গোড়াপত্তন করেন। বিজয় লাভে তিনি যেমন ছিলেন শান্ত ঠিক তেমনি পরাজয়েও তিনি ছিলেন বৈষয়িক ক্ষতিগ্রন্থের ব্যপারে উদাসীন।

কর্নওয়ালিশের জেলা প্রশাসন: লর্ড কর্নওয়ালিশের জেলা প্রশাসন ছিল নিম্নরূপ :

১. ত্রিপুরা জেলা সৃষ্টি: ১৭৯২ সালে ময়মনসিংহ জেলা থেকে পরগনা বলদাখান ও গঙ্গামণ্ডল, চট্টগ্রাম থেকে ভুলুয়া এবং ঢাকা থেকে পরগনা দাউদকান্দি আলাদা করে ত্রিপুরার সাথে সংযুক্ত করে ত্রিপুরা নামে একটি জেলা সৃষ্টি করা হয়। ১৭৯৩ সালে মোট জেলার সংখ্যা ছিল ১৫টি।

২. জেলা জজ নিয়োগ: ১৭৯৩ সালে কর্নওয়ালিশ তার কোডের মাধ্যমে জেলায় একজন সিভিল জজ নিযুক্ত করেন। ১৭৯৩ সালের সংস্কার জেলায় দুইটি কর্তৃপক্ষ সৃষ্টি করে। প্রথমত, সিভিল ও ম্যাজিস্ট্রেট। দ্বিতীয়ত, জেলা কালেক্টর। বেতন ও পদমর্যাদায় জেলা কালেক্টরের উপর জজ ও ম্যাজিস্ট্রেটের স্থান দেওয়া হয়। কোম্পানির কর্মচারীদের মধ্যে যারা সিনিয়র এবং সুদক্ষ তাদেরকে জেলা জজ ও ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

৩. জেলা কালেক্টরকে স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতা প্রদান: ১৭৮৫ সালে বোর্ড অব রেভিনিউর প্রেসিডেন্ট স্যার জন শোর মন্তব্য করেন আর্থিক ও রাজনৈতিক কারণে জেলা কালেক্টরের হাতে থাকা উচিত স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতা। একজনের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকলে একদিকে যেমন প্রশাসনিক কর কমে আসে, অপরদিকে কালেক্টর নেটিভদের ভয়ভীতি শ্রদ্ধা কুড়াতে থাকে। ১৭৮৬ সালে কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স জেলা কালেক্টরকে অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদানের পক্ষে মত প্রকাশ করেন। ফলে ১৭৮৭ সালে জেলা কালেক্টর নিয়োগ করে তার হাতে বিচার, পুলিশ ও রাজস্ব তিনটি ক্ষমতাই দেওয়া হয়।

৪. কালেক্টরদের আইনের আওতায় আনয়ন: কালেক্টরদের স্বৈরক্ষমতা খর্ব করেই কর্নওয়ালিশ ক্ষান্ত হননি। পূর্বে জেলা কালেক্টরদের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ আকারে আরজি করা যেতে, কিন্তু তার বেআইনি কাজকে কোনো আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেত না। কর্নওয়ালিশ এ সুবিধা থেকে কালেক্টরদের বঞ্চিত করে তাদেরকে সাধারণ আইনের অধীনে আনেন। ১৭৯৩ সালের সংস্কারের ফলে জনমত এ ধারণা সৃষ্টি হয় যে, কালেক্টররা আইনের উর্ধ্বে নয়।

৫. নিজামত ও দেওয়ানি জেলার পার্থক্য দূর: আধুনিক অর্থে জেলা প্রথার সৃষ্টি হয় ১৭৯০ সালে। ফৌজদারি বা পুলিশ প্রশাসন এলাকা ও দেওয়ানি বা রাজস্ব প্রশাসন এলাকা একে অপরের ভিতর প্রবিষ্ট ছিল। ১৭৯০ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ নবাবকে তার নিজামত ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করেন এবং সমস্ত ফৌজদারি বিচার ও পুলিশ ক্ষমতা জেলা কালেক্টরের উপর অর্পণ করেন। এভাবে নিজামত ও দেওয়ানি জেলার পার্থক্য দূর করা হয়। ১৭৯২ সাল পর্যন্ত কোম্পানি সরকারের নীতি ছিল জেলা কালেক্টরের হাতে জেলার সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত রাখা।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, লর্ড কর্নওয়ালিশ ক্ষমতা গ্রহণ করে কোম্পানি শাসনাধীন জেলা প্রশাসনকে ঢেলে সাজান। জেলা প্রশাসনের গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য দেওয়ানি ও নিজামত জেলাকে একই প্রশাসকের অধীনে নিয়ে আসেন। জেলা প্রশাসক কালেক্টরকে প্রভৃতি ক্ষমতা দেওয়া হলেও তাকে আইনের আওতায় ক্ষমতা ভোগ করার অধিকার দেওয়া হয়।