লর্ড ক্লাইভ কে ছিলেন?

অথবা, রবার্ট ক্লাইভের পরিচয় দাও।

অথবা, রবার্ট ক্লাইভ সম্বন্ধে যা জান লিখ।

অথবা, লর্ড ক্লাইভ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর।

উত্তর: ভূমিকা: ভারতবর্ষে কোম্পানি শাসন যাত্রা যার দ্বারা শুরু হয়েছিল তিনি হলেন লর্ড ক্লাইভ। তিনি দুই বার ভারতবর্ষে আগমন করে কোম্পানির ক্রান্তিলগ্নে এক দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে কোম্পানিকে একটি সুস্থির অবস্থায় আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

১. রবার্ট ক্লাইভের জন্ম ও কর্মজীবন: রবার্ট ক্লাইভ ২৯ সেপ্টেম্বর ১৭২৫ সালে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন বুদ্ধিমত্তার অধিকারী। তিনি মাত্র সতের বছর বয়সে কোম্পানি কর্তৃক নিয়োজিত হয়ে ভারতবর্ষে আসেন। প্রথম জীবন শুরু হয় কেরানি হিসেবে এবং পরে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তিনি কর্নেল পদে উন্নীত হন।

২. রবার্ট ক্লাইভের উত্থান: ক্লাইভ দ্বিতীয়বার গভর্নর নিযুক্ত হয়ে ভারতে এসে রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও কূটনৈতিক জ্ঞানের পরিচয় দেন। বক্সারের যুদ্ধের পর তিনি ইচ্ছা করলে অযোধ্যা এবং দিল্লি দখল করে সেখানে ব্রিটিশ প্রাধান্য স্থাপন করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা এবং দিল্লির সম্রাটের সঙ্গে এলাহাবাদের চুক্তি সম্পাদন করে বিচক্ষণতার পরিচয় দেন। রবার্ট ক্লাইভ দায়িত্বপ্রাপ্ত মানিক চাঁদকে বিতারিত করে ১৭৫৭ সালে ২ জানুয়ারি কলকাতা পুনরুদ্ধার করেন এবং অলীগড়ের সন্ধির মাধ্যমে দুর্গ নির্মাণ, বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ এবং আমদানি রপ্তানির সকল অধিকার লাভকরেন। অতঃপর রবার্ট ক্লাইভ ১৭৫৭ সালের ২৬ জুন পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধের নাটক মঞ্চস্থ করে নবাব সিরাজকে পরাজিত করে বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরকে বাংলার আসনে বসান।

৩. বাংলার গভর্নর পদে ক্লাইভ: পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করার পর মাদ্রাজ কাউন্সিল ক্লাইভকে বাংলার গভর্নর নিযুক্ত করেন। তিনি ৩ বছর বাংলা শাসন করে ১৭৬০ সালে ইংল্যান্ডে প্রত্যাবর্তন করেন।

৪. রবার্ট ক্লাইভের বাংলায় পুনঃগমন: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অতিরিক্ত মাত্রায় দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়লে তিনি ১৭৬৫ সালে দ্বিতীয়বার বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হয়ে ভারতবর্ষে গমন করেন।

৫. দেওয়ানি লাভ: লর্ড ক্লাইভ ২য় বার ভারতবর্ষে আগমন করে প্রথমেই বাংলা ও অযোধ্যার নবাবের সঙ্গে এবং অন্যদিকে মুঘল সম্রাটের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক নির্ধারণ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এ সময় বাংলায় এক শ্রেণির ইংরেজ কর্মচারী বাংলার বাহিরে অযোধ্যা এবং দিল্লিতে আধিপত্য স্থাপনের কথা ভাবতে থাকেন। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৭৬৫ সালে মুঘল সম্রাট শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় দেওয়ানি লাভ করেন।

৬. দ্বৈতশাসন প্রবর্তন: ক্লাইভ বাংলায় দ্বৈতশাসন প্রবর্তন করেন, যেখানে বিহার ও শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করবেন নবাব এবং নিরাপত্তা ও রাজস্ব ব্যবস্থা পরিচালনা করবেন ইংরেজ কোম্পানি। ক্লাইভ কর্তৃক দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা ছিল এদেশবাসীর জন্য এক চরম অভিশাপ। এ ব্যবস্থায় নবাব ও কোম্পানির উপর স্ব-স্ব দায়িত্ব অর্পিত হলেও প্রকৃতপক্ষে কারও কোনো ক্ষমতা ছিল না।

৭. লর্ড উপাধি লাভ: ১৭৬৫ সালে দেওয়ানি লাভের পর ব্রিটিশ সরকার ক্লাইভের বিচক্ষণতার স্বীকৃতিস্বরূপ ‘লর্ড’ উপাদি দান করেন।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ক্লাইভের চরিত্রে বিভিন্ন দোষ-ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসে তাঁর নাম অবিস্বরণীয় হয়ে আছে। তাঁর অক্লান্ত চেষ্টার ফলেই ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত্তি রচিত হয়। তাঁর শাসনামলেই বাংলায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়। ১৭৬৭ সালে ক্লাইভ স্বদেশে ফিরে যান এবং ১৭৭৪ সালে জালিয়াতি ও যুদ্ধের অপবাদ মাথায় নিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন।