অথবা, লর্ড ডালহৌসির সংস্কারমূলক কার্যাবলি সম্পর্কে কী জান?
অথবা, লর্ড ডালহৌসির সংস্কারমূলক কার্যাবলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর: ভূমিকা: ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অগ্রগাতিতে যে ক’জন গভর্নর সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন লর্ড ডালহৌসি তাদের মধ্যে অন্যতম। লর্ড ডালহৌসির পর ১৮৪৮ সালে গভর্নর জেনারেল হয়ে এসেই লর্ড ডালহৌসি ভারতের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেন। তিনি শাসন ক্ষেত্রের প্রতিটি বিভাগে কিছু না কিছু সংস্কার সাধন করেন। তার বিভিন্ন জনহিতকর সংস্কারগুলোকে ভারতীয় উপমহাদেশে আধুনিক সভ্যতার পক্ষে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা যায়।
লর্ড ডালহৌসির সংস্কামূলক কার্যাবলি: লর্ড ডালহৌসির সংস্কারমূলক কার্যাবলির বর্ণনা নিম্নে দেওয়া হলো:
১. বিবাহ আইন: তিনি বিবাহ আইন পাস করে হিন্দু বিধবাদের পুনরায় বিবাহের ব্যবস্থা করেন এবং হিন্দু সমাজের অন্যান্য কুসংস্কার ও দোষত্রুটি দূর করেন। অপর এক আইন পাস করে ভারতীয়গণকে ধর্মান্তর করলেও পৈতৃক সম্পত্তি ভোগ করার অধিকার প্রদান করা হয়।
২. জনকল্যাণ বিভাগ: ডালহৌসি জনকল্যাণ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ট্রাঙ্ক রোড, গঙ্গা খাল ও দোয়াব খাল খনন করেন। ইঞ্জিনিয়ারগণের ট্রেনিং গ্রহণ করার জন্য একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
৩. রেলপথ: ১৮৫৩ সালে তিনি বোম্বাই হতে পুনা পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম রেলপথ উদ্বোধন করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অংশ রেলপথ দ্বারা সংযোজিত করেন। এ ব্যবস্থা দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে লডাইয়ের এক অন্যতম উপায় বটে।
৪. শিক্ষা সম্প্রসারণ: তিনি ইংল্যান্ডের চার্লস উডকে শিক্ষা বিস্তারের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করে দিতে অনুরোধ জানান। চার্লস উডের পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি প্রতিটি জেলাতে একটি করে ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
৫. ডাক বিভাগ: তিনি দেশব্যাপী অর্ধ আনা মূল্যের ডাক সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করেন। তবে দূরত্ব বুঝে ডাক সরবরাহের খরচ আদায় করা হতো।
৬. বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাম: ভারতীয় উপমহাদেশে তিনিই সর্বপ্রথম বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফের ব্যবস্থা চালু করেন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ডালহৌসি ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে মজুবত করে শাসনক্ষেত্রে স্থিতি ও শৃঙ্খলা আনয়ন করে কৃতিত্বের পরিচয় দেন। ভারতে ব্রিটিশ শাসকদের মধ্যে কেউ ছিলেন বিজেতা, কেউ গঠনকারী, কেউবা সংস্কারক। কিন্তু লর্ড ডালহৌসি ছিলেন একাধারে বিজেতা, গঠনকারী ও সংস্কারক।