লর্ড ডালহৌসির সামাজিক সংস্কার আলোচনা কর।

অথবা, লর্ড ডালহৌসির সামাজিক সংস্কার সম্পর্কে কী জান?

অথবা, লর্ড ডালহৌসির সামাজিক সংস্কার বলতে কী বুঝ?

অথবা, লর্ড ডালহৌসির সামাজিক সংস্কার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও।

উত্তর: ভূমিকা: ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাসে লর্ড ডালহৌসি সাম্রাজ্যবাদী শাসক হিসেবে একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ভারতীয় উপমহাদেশ যে সকল গভর্নর জেনারেল প্রেরণ করেছেন তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনের শাসনতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের পর ভারতীয় উপমহাদেশে আবহমানকাল ধরে চলতে থাকা সামাজিক প্রথা প্রতিষ্ঠানের সংস্কার সাধনে মনোনিবেশ করেন।

সামাজিক সংস্কার: সামাজিক ক্ষেত্রে তার সংস্কারসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. হিন্দু বিধবাদের পুনর্বিবাহের অধিকার প্রদান: লর্ড ডালহৌসির সমাজ সংস্কারমূলক কাজের মধ্যে একটি অন্যতম কাজ হলো বিধবা বিবাহের অনুমোদন। তিনি বিধবা বিবাহ আইন পাস করে হিন্দু বিধবা বিবাহকে আইনসঙ্গত করেন। বিধবা বিবাহ প্রচলনে পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাকে যথেষ্ট সাহায্য করেন।

২. গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডের পুনঃনির্মাণ: আফগান নেতা শেরশাহের সময়ে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডের নির্মাণ শুরু হয়। লর্ড ডালহৌসি সেই রোডের নির্মাণে সমাপ্তি ঘটান। এতে করে ভারতে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়।

৩. গঙ্গার খাল খনন: লর্ড ডালহৌসির সামাজিক সংস্কারমূলক কাজের মধ্যে আরেকটি কৃতিত্বপূর্ণ কাজ হলো গঙ্গা খাল খনন। তিনি গঙ্গা খাল খনন করে অভ্যন্তরীণ নৌযোগাযোগ ও বাণিজ্যের গতি সঞ্চারিত করেন।

৪. ডাক-বিভাগ: লর্ড ডালহৌসি দেশব্যাপী অর্ধআনা মূল্যের ডাক সরবরাহ করার ব্যবস্থা চালু করেন। তার পূর্বে দূরত্ব বুঝে ডাক সরবরাহ খরচ আদায় করা হতো।

৫. বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফ চালু : লর্ড ডালহৌসির সময় সর্বপ্রথম বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা চালু হয়। এতে করে অফিস আদালতে কাজকর্মে যে বিলম্ব ঘটতো তার অবসান ঘটে। এর মাধ্যমে জরুরি সংবাদ খুব দ্রুত দেশের এক পান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাঠানো হতো।

৬. রেলপথ স্থাপন: লর্ড ডালহৌসিই প্রথম গভর্নর জোনারেল যিনি ভারতে রেলপথ স্থাপন করেন। এটা স্থাপিত হয় ১৮৫৩ সালে। প্রথমে বোম্বাই থেকে থানা পর্যন্ত ও পরে কলকাতা থেকে রাণিগঞ্জ এলাকার মধ্যে রেল চালু হয়। ফলে, ভারতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নব বিপ্লব ঘটে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, লর্ড ডালহৌসি সামাজিক ক্ষেত্রেও বিভিন্ন প্রশংসনীয় সংস্কার সাধনে ব্রতী হয়েছিলেন। ভারতবর্ষে ধর্মান্তরিত ব্যক্তি পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হতো। তিনি আইনের মাধ্যমে ধর্মান্তরিত ভারতবাসীদের পৈতৃক সম্পত্তি ভোগ করার অধিকার প্রদান করেন।