লাহোর প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা কর।

অথবা, লাহোর প্রস্তাবের মূল লক্ষ্যগুলো কী কী?

উত্তর: ভূমিকা: আজকের যে, স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা বসবাস করছি তার পূর্ব ইতিহাস বিবেচনা করলে বলা যায় লাহোর প্রস্তাবই এই স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিল। ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের কারণেই বাঙালি স্বাধীন সার্বভৌম স্বাধীন হয়। এক কথায় যদি বলা হয় এটা বাঙালির জন্য ছিল আশীর্বাদপূর্ণ প্রস্তাব।

লাহোর প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য: লাহোর প্রস্তাবের ব্যাখ্যা নিয়ে এক সময় বিভিন্ন জনের ভিন্ন ভিন্ন মত থাকলেও, আজ এটা স্বীকৃত যে, স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ (Independent States) দ্বারা উল্লিখিত দুটি অঞ্চলে বস্তুত দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। সবারই জানা যে, এই প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এ. কে. ফজলুল হক। তিনি কখনো জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন না। লাহোর-প্রস্তাবের কোথাও দ্বি-জাতি তত্ত্বের উল্লেখ নেই। এই প্রস্তাবের কোথাও পাকিস্তান শব্দটিরও উল্লেখ নেই, যদিও তা দ্রুত পাকিস্তান প্রস্তাব হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। উপমহাদেশের আন্তঃরাজনৈতিক অবস্থা তথা ব্রিটিশ শোষণ থেকে এ উপমহাদেশের মুক্তি এবং উপমহাদেশে বিভাজন নীতিই ছিল লাহোর প্রস্তাবের মূখ্য উদ্দেশ্য। এর অন্যান্য উদ্দেশ্যগুলো হলো-

১. মুসলমানদের স্বার্থরক্ষার নিমিত্তে লাহোর প্রস্তাব পেশ করা হয়।

২. বঙ্গদেশের সঠিক ভূ-সীমা নির্ধারণের নিমিত্তে লাহোর প্রস্তাব পেশ করা হয়।

৩. আন্তঃস্বার্থের সঠিক মীমাংসার জন্য লাহোর প্রস্তাব পেশ করা হয়।

৪. স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য এ প্রস্তাব পেশ করা হয়।

১৯২৮ সালে প্রকাশিত নেহেরু রিপোর্ট, ১৯৩৭ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনের পর কংগ্রেস শাসিত প্রদেশসমূহে মুসলিম মন্ত্রী অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মতানৈক্য, কংগ্রেস শাসিত প্রদেশগুলোতে দলীয়করণ ও সাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রদর্শন ভারতীয় মুসলমানদের হতাশ করে। এর ফলে মুসলমান নেতাগণ নিজেদের পৃথক অস্তিত্ব রক্ষায় সচেষ্ট হন। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তার দ্বিজাতিতত্ত্ব প্রকাশ করেন। এই তত্ত্ব ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোর মুসলিম লীগ সম্মেলনে গৃহীত হয়। মূলত লাহোর প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্যই ছিল ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে উপমহাদেশের জনগণকে সুস্পষ্টভাবে দুভাগে বিভক্ত করে দুটি পৃথক সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠন।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, প্রস্তাব শেষে বাংলা যিনি পেশ করেছেন বাঙালির প্রতি গভীর মমত্ববোধ ও দেশের প্রতি ভালবাসার এক বিমূত্র প্রতীক হিসেবে তাকে তার এই ঐতিহাসিক সৎ উদ্দেশ্যের প্রস্তাবের জন্য আজকের বাংলাদেশ তার কাছে চিরঋণী।