অথবা, শিশু কল্যাণ বলতে কি বুঝ?
অথবা, শিশুর কল্যাণের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, শিশু কল্যাণ সম্পর্কে যা জান লিখ।
উত্তর: ভূমিকা: শিশুরা হলো আগামী জাতির ভবিষ্যত। শিশুদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা মানেই সমগ্র জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। শিশুরা নিস্পাপ কিন্তু তারা তাদের অধিকার, ভালবাসা, স্বার্থ ও সুযোগ সুবিধা হতে হয় বঞ্চিত। বাংলাদেশে লাখ লাখ শিশু রাস্তাঘাটে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেক শিশু আবার অনাথ ও এতিম, অসহায়। এদের শিক্ষা দীক্ষা ও সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের লক্ষ্যে শিশুকল্যাণ নামক একটি কর্মসূচির যাত্রা শুরু হয়েছে। যা শিশুদের কল্যাণ সাধনেই সর্বদা ব্যপ্ত থাকে। শিশুকল্যাণই পারে আগামী দিনের কর্ণধার শিশুদেরকে যোগ্য নেতৃত্বসম্পন্ন মানুষ করে গড়ে তুলতে।
শিশুকল্যাণ: শিশুকল্যাণ প্রত্যয়টি ব্যাপক। শিশুকল্যাণ বলতে জন্মের পূর্ব থেকে শুরু করে কৈশোর পর্যন্ত শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ও কল্যাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত কর্মসূচিকে বুঝায়। কোনোরূপ বৈষম্য ব্যতীত দেশের সব শিশুর প্রতিভা ও সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের এটি কাজ করে থাকে।
সাধারণ অর্থেঃ সাধারণ অর্থে কতিসর শিশুর কল্যাণ সাধনের নিমিত্তে যে সকল ব্যবস্থাবলি গৃহীত ও পরিচালিত হয় তাদের সমষ্টিকে শিশুকল্যাণ বলে। দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিশুকল্যাণ কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ
হ্যাজেল ফ্রেডারিকসেন বলেছেন, “শিশুকল্যাণ বলতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত সেসব সামাজিক, অর্থনৈতিক ও দৈহিক কার্যক্রমকে বুঝায় যেগুলো সকল শিশুর দৈহিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, মানসিক ও আবেগের উন্নতি ও সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত।”
সমাজকর্ম অভিধানের সংখ্যানুযায়ী, “শিশুকল্যাণ হচ্ছে মানব সেবা ও সমাজকল্যাণ কর্মসূচির অংশবিশেষ এবং শিশুর সংরক্ষণ, পরিচর্যা ও সুস্থ বিকাশের আদর্শমুখী।”
ভারতীয় সমাজকর্ম বিশ্বকোষ এর সংজ্ঞানুযায়ী, “শিশুকল্যাণ বলতে শিশুদের সামগ্রিক কল্যাণকে নির্দেশ করে। এটি শিশুর দৈহিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, আবেগীয় ও সামাজিক সুপ্ততার পরিপূর্ণ বিকাশে নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় সকল সেবাকে অন্ত র্ভুক্ত করে।”
শব্দগত অর্থে: শিশুকল্যাণের ইংরেজি শব্দরূপ হলো “Child Welfare”। তাই শব্দগত অর্থে শিশুকল্যাণ বলতে শিশুদের কল্যাণের নিমিত্তে প্রচেষ্টার বাস্তবায়ন।
বিশেষ সংজ্ঞা: শিশুকল্যাণ প্রত্যয়টির বিশেষ সংজ্ঞায়ন করেছেন Dr. Md. Ali Akbar তাঁর Elements of social welfare নামক গ্রন্থে এভাবে “শিশুকল্যাণ বলতে কোন শিশুর জন্মের পূর্বের ও পরের শৈশবকালের ও স্কুল পূর্বে হতে বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণকে বুঝায়।”
শিশুকল্যাণ মূলকথাঃ সমাজের জাত-ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শিশুর ০-১৮ বছর পর্যন্ত দৈহিক, মানসিক, বৃদ্ধিবৃত্তিক ও পারিপার্শ্বিক বিকাশ সাধনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পরিচালিত বিভিন্ন কার্যক্রমের সমষ্টিকেই নির্দেশ করে। এ কথা সবার জন্য যে বাংলাদেশে শিশু জন্মহার বেশি। প্রতিবছর হাজার হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে। তাদের খাদ্য, বাসস্থান ও চিকিৎসার ও শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পিতামাতা প্রায় ব্যর্থ হচ্ছে। অধিকন্তু, সংসার ভাঙ্গন, মা-বাবার মৃত্যু ও আর্থিক অনটন এসব শিশুদের সুষ্ঠু বিকাশে বাধার সৃষ্টি করছে। আর এ সমস্যা উত্তরণ করে আদর্শ জাতিসত্তা বিনির্মাণে অতুলনীয় ভূমিকা রাখছে শিশু কল্যাণ কর্মসূচি।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, শিশুকল্যাণ জাতির ভবিষ্যৎ চালকদের সামাজিক, দৈহিক ও যুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে অনন্য ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশে দিন দিন শিশুকল্যাণের গুরুত্ব বেড়েই চলেছে। মূলত শিশুদের জন্মলগ্ন থেকে কৈশোর পর্যন্ত সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের আওতায় এনে সুনাগরিক গড়ে তোলার যে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। পরিচালিত হয় তাকেই শিশুকল্যাণ হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই শিশুকল্যাণ শিশুদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।