সংক্ষেপে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা, সংক্ষেপে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।

উত্তর। ভূমিকা: ১৯৫৪ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নিবার্চনের গুরুত্ব বাংলাদেশের শাসনতান্ত্রিক উন্নয়নে অপরিসীম। এ নির্বাচন শুধু মুসলিম লীগের পরাজয় ত্বরান্বিত করেনি বরং পরবর্তীকালে পাকিস্তানিদের শোষণ শাসনের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে গড়ে উঠা আন্দোলনের জ্বালানি যুগিয়েছিল।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব: নিচে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব বা তাৎপর্য আলোচনা করা হলো। ১. মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রভাব বৃদ্ধি: ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভকারী যুক্তফ্রন্ট ছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধি। এ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে ১৯৫৪ সালের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২. বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ: এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় ছিল মূলত বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিজয়। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে সৃষ্ট বাঙালি জাতীয়তাবাদ এ নির্বাচনের মাধ্যমে সুদৃঢ় ভিত্তি লাভ করে। পরবর্তীতে এ জাতীয়তাবাদ আরো বিকশিত হয় যার ফলে সংঘটিত হয় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ।

৩. অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিকাশ: মূলত বাঙালির চেতনা ছিল অসাম্প্রদায়িকতার চেতনা। এ অসাম্প্রদায়িক চেতনার মনোভার থেকেই বাঙালি ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং জয়লাভ করে। যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের মাধ্যমে তাই অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিকাশ ঘটে।

৪. নৌকার পরিচিতি: ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রতীক ছিল নৌকা। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং জয়লাভ করে।

৫. মুসলিম লীগের ভরাডুবি: এ নির্বাচনে মুসলিম লীগ মাত্র ৯টি আসন লাভ করে। এ নির্বাচনের মাধ্যমেই মানুষের নিকট মুসলিম লীগের প্রকৃত মুখোশ উন্মোচন হয় এবং পাকিস্তানের রাজনীতি থেকে মুসলিম লীগের বিদায় ঘটে।

৬. স্বায়তশাসনের দাবি পেশ এ নির্বাচনে বিজয়ের অনুপ্রেরণা থেকেই ১৯৬৬ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলোর এক সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান স্বায়ত্তশাসনের দাবি সংবলিত ৬ দফা পেশ করেন।

উপসংহার: পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ১৯৫৪ সালের নির্বাচন পরবর্তীকালীন সকল আন্দোলন সংগ্রামে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। এদিক থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এ আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম।