অথবা, সামাজিক নীতির প্রতিবন্ধকতা লিখ। সামাজিক নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সমাজকর্মী কি ভূমিকা পালন করে সেগুলো লিখ।
উত্তর: ভূমিকা: সামজিক পরিমণ্ডলে কাজ করতে গিয়ে একজন সামাজকর্মীকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রণীত সমাজিক নীতির কাঠামোর আওতায় সমাজকর্ম অনুশীলন করতে হয়। এতে করে সমাজকর্ম অনুশীলন করতে গিয়ে সামাজিক নীতি অনুশীলনে সমাজ কর্মীর যেমন কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেন, তেমনি সামাজিক নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। সামাজিক নীতি প্রণীত হয় কতগুলো সুনির্দিষ্ট ধাপের মাধ্যমে।
সামাজিক নীতির সীমান্ধতা: সামাজিক নীতির সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
১. জনগণের অংশগ্রহণ না থাকাঃ সামাজিক নীতি প্রণয়নকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী দক্ষ থাকে না। তাদের এ বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ না থাকলে তা বস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না তাই যাদের জন্য নীতি প্রণয়ন করা হবে তাদের অংশগ্রহণ খুবই জরুরি।
২. দক্ষ কর্মীর অভাবঃ অনেক সময় নীতি প্রণয়নকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দক্ষ থাকে না। তাদের এ বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় না। যার কারণে প্রণীত নীতির যথার্থ বাস্তবায়ন করা দুরুহ হয়ে পড়ে যা নীতির বাস্ত বায়নে একটি বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে চিহ্নিত।
৩. সঠিক তথ্যের অভাবঃ নীতির ক্ষেত্রে সঠিক তথ্যের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সঠিক তথ্যের অভাবে নীতির কার্যকারিতা থাকে না। ফলে নীতি বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়ে।
৪. অর্থনৈতিক দিকে প্রাধান্য: সামাজিক নীতি প্রণয়ন করার সময় সামাজিক দিককে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সামাজিক নীতির বড় প্রতিবন্ধকতা হলো অর্থনৈতিক দিককে বেশি প্রাধান্য দেয়া। সামাজিক নীতি প্রণয়নে অর্থনৈতিক দিককে প্রধান্য দেয়া হলো সামাজিক দিকসমূহ উপেক্ষিত থেকে যায়।
৫. অর্থের স্বল্পতাঃ নীতি বাস্তবায়ন করতে হলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠান অর্থের স্বল্পতা দেখা দিলে সামাজিক নীতি বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়।
সামাজিক নীতি প্রণয়নে সমাজকর্মীর ভূমিকা আলোচনা করা হলোঃ
১. সমস্যা চিহ্নিত করা: সামাজিক নীতি প্রণয়ন করার আগে সমস্যা চিহ্নিত করতে হয়। সমস্যা চিহ্নিত করে নীতি প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। এই সমস্যা চিহ্নিত করে থাকেন সমাজকর্মী, কারণ সমাজকর্মী সামাজিক সমস্যার সমাধানে ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন।
২. নীতি প্রণয়নে প্রাসঙ্গিক তথ্য সরবরাহ: সামাজিক নীতি প্রণীত হয়ে থাকে বাস্তবভিত্তিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে। বস্তুনিষ্ঠ তথ্য ব্যতিরেকে বাস্তবমুখী ও কার্যকর সামাজিক নীতি প্রণয়ন সম্ভব নয়। সমাজকর্মীরা সমাজকর্ম অনুশীলন করতে গিয়ে সামাজিক গবেষণা কৌশল প্রয়োগ করে নীতি প্রণয়নে প্রয়োজনীয় প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। সংগৃহীত এসব নীতি প্রণেতাদেরকে বাস্তবমুখী নীত প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
৩. নীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসেবেঃ সামাজিক নীতি প্রণয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো কমিটি গঠন। এ কমিটি নীতি প্রণয়নের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে থাকে। বাস্তব প্রয়োজন ও সমস্যা সম্পর্কে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন সমাজকর্মী নীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিেেসব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। কমিটির একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে জন অংশগ্রহণ নিশ্চতকরণ, তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের মতামত গ্রহণ, জনগণকে সংগঠিতকরণ প্রশাসনিক সাহায্য সহযোগিতা নিশ্চতকরণের ক্ষেত্রে গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন।
৪. খসড়া প্রস্তাব তৈরিতে: নীতি প্রণয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো খসড়া প্রস্তাব। নীত প্রস্তুত করা। কোনো ক্ষেত্রে অনুভূত নীতি প্রস্তুত করা। কোনো ক্ষেত্রে অনুভূত প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে সামাজিক নীতি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে তথ্যের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়। প্রতিটি পর্যায়েই সমাজকর্মী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। খসড়া প্রস্তাব তৈরিকালে সমাজকর্মী জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করাসহ জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নিশ্চিত করেন। সমাজকর্মী বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখেন যাতে কোনো “Vague policy” বা অস্পষ্ট নীতি প্রণীত না হয় এছাড়াও সমাজকর্মী বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখেন নীতি যাতে বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে গৃহীত তথ্যের আলোকে যৌক্তিকভাবে প্রণীত হয়।
৫. নীতি বিশ্লেষণ ও অনুধ্যানঃ খসড়া নীতি প্রণয়নের পরবর্তী ধাপ হলো প্রস্তুতকৃত খসড়া নীতি বিশ্লেষণ ও অনুধ্যান। এ পর্যায়ে প্রণীত নীতির বিভিন্ন দিক অনুধ্যান করা এবং নীতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে এর যথার্থতা যাচাই করা হয়। নীতি বিশ্লষণ এক প্রকারের মূল্যায়ন।
অর্থাৎ, নীতি বিশ্লেষণ হলো সুশৃঙ্খল উপায়ে কোনো নির্দিষ্ট নীতি এবং যে প্রক্রিয়ায় নীতিটি গঠিত হয়েছে তার মূল্যায়ন করা নীতি বিশ্লেষণ ও অনুধ্যানের মাধ্যমে প্রথমত নীতির গঠনগত ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলে তা সংশোধন করা সম্ভব হয়, দ্বিতীয় নীতির বাস্তব প্রয়োগ উপযোগিতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
৬. খসড়া নীতির পরীক্ষামূলক অনুশীলন: নীতি প্রণয়ন প্রক্রিনয়ায় গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হলো প্রস্তাবিত খসড়া নীতির অনুশীলন। এ পর্যায়ে খসড়া নীতির পরীক্ষামূলক অনুশীলনের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে গৃহীত খসড়া নীতির বাস্তব প্রয়োগ উপযোগিতা যাচাই করা হয়।
৭. চূড়ান্ত নীতি প্রণয়নঃ নীতি প্রণয়নের সর্বশেষ পর্যায় হলো চূড়ান্ত নীতি প্রণয়ন। এ পর্যায়ে নীতি চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয় এবং বিধিবদ্ধকরণের মাধ্যমে নীতি উপস্থাপন করা হয়। খসড়া নীতি প্রণয়ন, খসড়া নীতি বিশ্লেষণ ও অনুধ্যান শেষে পরীক্ষামূলক অনুশীলন করা হয়। এ পর্যায়গুলোতে নীতির প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সংশোধন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে নীতিকে একটি চূড়ান্ত আকার দেয়া হয়। অতঃপর নীতিকে অনুমোদনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, স্বভাবত সমাজকর্মীকে সমাজকর্ম অনুশীলন করতে গিয়ে সামাজিক নীতি অনুশীলন করতে গিয়ে সামাজিক নীতি অনুশীলন করতে হয়। আবার সামাজিক বিভিন্ন বিষয়গুলো যোগাযোগ ঘটে বলে নতুন নতুন ক্ষেত্রে সামাজিক নীতি প্রণয়ন এবং পুরাতন সামাজিক নীতি সংশোধনেও একজন সমাজকর্মীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।