অথবা, সামাজিক নীতির প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ কর। সামাজিক নীতির গুরুত্ব সম্পর্কে লিখ।
উত্তর: ভূমিকাঃ আধুনিক যুগ পরিকল্পনার যুগ। যে-কোনো সমাজ বা রাষ্ট্রের উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর পরিকল্পনা। আওতাধীন সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছানোর ক্ষেত্রে বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনার বিকল্প নেই। পরিকল্পনাকে সনির্দিষ্ট পথে পরিচালনাও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বৃহত্তর লক্ষ্যার্জনের জন্য প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক নীতি।
সামাজিক নীতির সীমাবদ্ধতা তুলে ধরা হলোঃ
১. জনগণের অংশগ্রহণ না থাকাঃ সামাজিক নীতি জনগণের কল্যাণের লক্ষ্যে প্রণীত হয়ে থাকে। কিন্তু নীতি প্রণয়নে জনগণের অংশগ্রহণ না থাকলে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। তাই যাদের জন্য নীতি প্রণয়ন করা হবে তাদের
অংশগ্রহণ খুবই জুরুরি।
২. দক্ষ কর্মীর অভাবঃ অনেক সময় নীতি প্রণয়নকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দক্ষ থাকে না। তাদের এ বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় না। যার কারণে প্রণীত নীতির যথার্থ বাস্তবায়ন করা দুরুহ হয়ে পড়ে যা নীতির যথার্থ বাস্তবায়ন করা দুরূহ হয়ে পড়ে যা নীতির বাস্তবায়নে একটি বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে চিহ্নিত।
৩. সঠিক তথ্যের অভাবঃ নীতির ক্ষেত্রে সঠিক তথ্যের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সঠিক তথ্যের অভাবে নীতির কার্যকারিতা থাকে না। ফলে নীতি বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়ে।
৪. অর্থনৈতিক দিকে প্রাধান্যঃ সামাজিক নীতি প্রণয়ন করার সময় সামাজিক দিককে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সামাজিক নীতির বড় প্রতিবন্ধকতা হলো অর্থনৈতিক দিককে বেশি প্রাধান্য দেয়া। সামাজিক নীতি প্রণয়নে অর্থনৈতিক দিককে প্রাধান্য দেয়া হলে সামাজিক দিকসমূহ উপেক্ষিত হয়।
৫. অর্থের স্বল্পতাঃ নীতি বাস্তবায়ন করতে হলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানে অর্থের স্বল্পতা দেখা দিলে সামাজিক নীতি বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়।
সামাজিক নীতির গুরুত্ব আলোচনা করা হলোঃ
১. সামাজিক সমস্যা মোকাবেলা: সামাজিক সমস্যা একটি সার্বজনীন বিষয়। প্রকৃতিগত দিক থেকে ভিন্ন হলেও প্রত্যেক সমাজেই সামাজিক সমস্যা বিদ্যমান। সামাজিক নীতি সামাজিক সমস্যা মোকাবেলায় একটি যৌথ প্রয়াস। সামাজিক নীতি সম্পর্কে বলা হয়, “A collective strategy of a dress social problems” সামাজিক নীতির মাধ্যমে সুচিন্তিত ও বাস্তবভিত্তিক উপায়ে সামাজিক সমস্যা মোকাবেলা সম্ভব।
২. পরিকল্পিত সামাজিক পরিবর্তন আনয়ন: সমাজ পরিবর্তনশীল হলেও তা সব সময় ইতিবাচক ধারায় প্রবাহিত হয় না। সামাজিক পরিবর্তনের ফলে তাই সব সময় ইতিবাচক নয়। সামাজিক পরিবর্তনের ধারাকে ইতিবাচক ধারায় প্রবাহিত করে বঞ্চিত ও পরিকল্পিত সামাজিক পরিবর্তন আনয়নে সামাজিক নীতি অপরিহার্য।
৩. উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা: উন্নয়নের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন। টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়ন অপরিহার্য। সামাজিক নীতি সামাজিক উন্নয়ন
নিশ্চিতের মাধ্যমে উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।
৪. সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: একটি দেশের সামাজিক নীতিই নির্ধারণ করে দেয়, সে দেশের জনগণের জন্য গৃহীত সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন হবে।
৫. সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চতকরণ : উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে বাস্তবমুখী পরিকল্পনার মাধ্যমে সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা। আর তা কেবল সুনির্দিষ্ট সামাজিক নীতির মাধ্যমে সম্ভব।
৬. উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন: সামাজিক নীতি উন্নয়ন পরিকল্পনার দিক-নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। সামাজিক নীতিকে উন্নয়ন পরিকল্পনা Blue print বলা হয়।
৭. মানব সম্পদ উন্নয়ন: প্রত্যেকটি দেশে নারী উন্নয়ন, যুব উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নীতি রয়েছে। যেগুলোর মাধ্যমে মানব সম্পদ উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
৮. সুশৃঙ্খল সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলা: সামাজিক নীতি সমাজস্থ মানুষের পারস্পরিক সঠিক সম্পর্ক নির্ধারণের সাথে সম্পৃক্ত। সামাজিক পরিবেশে ব্যক্তিতে-ব্যক্তিতে দলে-দলে সঠিক সম্পর্ক নির্ধারণ ও বজায় রাখার মধ্যমে সামাজিক সৌহার্দ্য বজায় রাখতে সামাজিক নীতি কার্যকর। আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক তাই আধুনিক সামাজকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক নীতি সমাজের সার্বিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় এনে সামাজিক উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতাগুলোকে প্রতিরোধ করে এবং সামাজিক উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করে।