অথবা, সার্বভৌমত্বের বহুত্ববাদের সংজ্ঞা দাও।
উত্তরঃ ভূমিকা: রাষ্ট্র গঠনের প্রধান চারটি উপাদান হলো সার্বভৌমত্ব, জনসমষ্টি, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ও সরকার। এ উপাদানগুলোর মধ্যে সার্বভৌমত্ব অন্যতম উপাদান। সার্বভৌমত্ব ছাড়া কোন রাষ্ট্রের কল্পনা করা যায় না। সার্বভৌমত্ব ধারণাটি আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভিত্তি। সার্বভৌমত্ব অর্জন না করলে যেমন রাষ্ট্র গঠিত হয় না, তেমনি সার্বভৌমত্বের বিলুপ্তির সাথে সাথে রাষ্ট্রেরও বিলুপ্তি ঘটে। সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে Prof. Miller বলেছেন, “We must recognise the sovereignty state as the prime fact of political life.”
সার্বভৌমত্বের বহুত্ববাদ: রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার চরম, অবাধ এবং অখণ্ড অস্তিত্বের প্রচার একত্ববাদ নামে পরিচিত। একত্ববাদের কেন্দ্রীভূত সর্বাত্মক ও অবাধ রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিক্রিয়ার ফল হলো বহুত্ববাদ। তবে বর্তমানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় কেবল একত্ববাদের সমালোচনা হিসেবে নয়, বরং স্বতন্ত্র রাজনৈতিক মতবাদ হিসেবে বহুত্ববাদ সুপ্রতিষ্ঠিত। ব্যক্তি ও সংঘজীবনের সর্বত্র রাষ্ট্রের অত্যধিক প্রাধান্য বিস্তার এবং অনাবশ্যক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে যে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়, রাজনৈতিক চিন্তাজগতে তা বহুত্ববাদ নামে পরিচিত। বহুত্ববাদের সার্থক প্রবক্তা হিসেবে গিয়ার্কে, মেইটল্যান্ড, বার্কার, লিন্ডসে, লাস্কি, ম্যাকাইভার প্রমুখ ব্যক্তির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সার্বভৌমিকতা সম্পর্কিত বহুত্ববাদের উদ্ভবের পিছনে দু’টি কারণ আছে। একটি হলো, একত্ববাদী আইনানুগ সার্বভৌমিকতার বিরোধিতা করা এবং অপরটি হলো, রাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন সংঘ সংগঠনের স্বাধীন অস্তিত্বকে প্রতিষ্ঠিত করা। অধ্যাপক লাস্কি (Laski) বলেছেন, “Because society js federal authority must be federal also.”
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, বহু সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও একত্ববাদই সারা বিশ্বে প্রচলিত। তাদের চিন্তাধারার উপর ভিত্তি করেই রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতা মূল্যায়িত হয়। তবে বহুত্ববাদীদের সমালোচনায় অবশ্যই যুক্তি আছে। তারা রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতার উপযোগিতাকে আদৌ উপেক্ষা না করে রাষ্ট্রের চরম, সর্বাত্মক ও অবাধ কর্তৃত্বকে খর্ব করেছে মাত্র।