সিপাহী বিদ্রোহের কারণ আলোচনা কর।

অথবা, সিপাহী বিদ্রোহের কারণসমূহ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

অথবা, সিপাহী বিদ্রোহের কারণসমূহ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তর: ভূমিকা: ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ বা সিপাহী বিদ্রোহ আধুনিক ভারতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ বিদ্রোহ সর্বপ্রথম বাংলার মাটিতেই দেখা দেয়। ক্রমে এটি মিরাট, দিল্লি, যুক্ত প্রদেশ, মধ্যভারত প্রভৃতি স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতবর্ষের ইতিহাসে এটি ছিল প্রথম গণবিদ্রোহ যা প্রত্যক্ষ ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আরম্ভ হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের প্রয়াস পেয়েছিল।

সিপাহী বিদ্রোহের কারণ : ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের কারণসমূহ নিম্নরূপ:

১. বেতনের ক্ষেত্রে বৈষম্য: বেতনের ব্যাপারে ভারতীয় ও ইংরেজ সৈন্যদের মধ্যে বিরাট ব্যবধান বিদ্যমান ছিল। সামরিক কারণে ইংরেজ সৈন্যরা দূরদেশে অবস্থানের কারণে ভাতা পেত কিন্তু ভারতীয় সৈন্যরা তা থেকে বঞ্চিত হতো।

২. ব্রিটিশ কর্মচারীদের অত্যাচার: ব্রিটিশ কর্মচারীরা ভারতের নিরীহ জনগণকে উৎপীড়িত করতো। তারা নানা স্থানে জনসাধারণের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালাতে থাকে। এতে জনগণের মধ্যে অনেকখানি ক্ষোভ বেড়ে যায়।

৩. কৃষি অর্থনীতি ধ্বংস: ব্রিটিশরা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন ও নীল চাষের মাধ্যমে বাংলা তথা ভারতীয় কৃষি অর্থনীতি ধ্বংস করে দেয়। এভাবে কৃষি অর্থনীতি ধ্বংসের পথে অগ্রসর হওয়ায় জনগণ বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে, যা তাদেরকে সিপাহী বিদ্রোহে অনুপ্রাণিত করে।

৪. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত: ইসলামি প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়াককৃত বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত এবং উচ্ছেদ ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দাবানল জ্বালিয়ে দেয়।

৫. মঙ্গল পান্ডের বিদ্রোহ ঘোষণা: ১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ ব্যারাকপুর সেনানিবাস থেকে মঙ্গল পান্ডে নামে এক ব্রাহ্মন সিপাহী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রকাশে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। পরে সমগ্র ভারতে এ বিদ্রোহ ঘোষণা করে। পরে সমগ্র ভারতে এ বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ভারতীয় জনগণ এর সাথে যোগ দিলে সামরিক বিদ্রোহ পরিণত হয় মহাবিদ্রোহে।

৬. এনফিল্ড রাইফেলের প্রবর্তন : ১৮৫৬ সালে সেনাবাহিনীতে এনফিন্ড ‘রাইফেল’ নামে এক ধরনের অস্ত্র প্রচলন করা হয়। এই রাইফেলের কার্তুজ পশুর চর্বি মিশ্রিত ছিল যা দাঁত এক দিয়ে কেটে রাইফেলে ঢুকাতে হতো। ভাতীয় সিপাহীরা মনে করে এর যে, গরু ও শুকরের চর্বি মিশ্রিত কার্তুজের প্রচলন করে ব্রিটিশ সরকার হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ে সৈন্যদের ধর্মনাশের সহীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। ফলে বিদ্রোহ আরো গভীর হয়ে ওঠে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশদের শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে ভারতী জনগণের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভরিও অসন্তোষেরই তীব্র বহিঃপ্রকাশ ছিল এই বিদ্রোহ। সিপাহী জনতার স্বঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সংঘটিত এই বিদ্রোহ ছিল ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশ শাসন উচ্ছেদের প্রথম পদক্ষেপ।