অথবা, অগাস্টিনের দুই রাষ্ট্রতত্ত্বের স্বরূপ সংক্ষেপে নির্ণয় কর।
অথবা, ‘সেন্ট অগাস্টিনের রাষ্ট্র সম্পর্কিত মতবাদ সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
অথবা, সেন্ট অগাস্টিনের পার্থিব রাষ্ট্র ও বিধাতার রাষ্ট্রতত্ত্ব সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, সেন্ট অগাস্টিনের জাগতিক রাষ্ট্র ও ঈশ্বরের রাষ্ট্রের ধারণা দাও।
উত্তরঃ ভূমিকা: রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে সেন্ট অগাস্টিন একটি বিশিষ্ট নাম। গ্রিক ও রোমান সভ্যতা এবং খ্রিস্টীয় সভাতার সন্ধিস্থলে দাঁড়িয়ে সেন্ট অগাস্টিন এ পৃথিবীর মানুষের জন্য এক অভয় বাণী উচ্চারণ করেন তাঁর বিখ্যাত ‘The City of God’ গ্রন্থে। অগাস্টিন তাঁর ‘The City of God’ গ্রন্থে রাষ্ট্র ও গির্জার পারস্পরিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে দুই রাষ্ট্রতত্ত্ব অর্থাৎ পার্থিব রাষ্ট্র ও বিধাতার রাষ্ট্র সম্পর্কে ধারণা দেন। তাঁর দুই রাষ্ট্রতত্ত্বের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো। রাষ্ট্র ও সমাজে দেহসর্বস্ব ও আতত্মসর্বস্ব এ দু’শ্রেণির মানুষ বাস করে।
রাষ্ট্রতত্ত্বের বর্ণনা: রাষ্ট্র হলো শান্তির প্রতীক। শান্তির উৎস কেবল ঈশ্বর। তাই রাষ্ট্র স্রষ্টার, মানুষের নয়। মানুষ যাতে পাপ কাজ করতে না পারে সে জন্য রাষ্ট্রের উৎপত্তি। কিন্তু কিছু পাপিষ্ঠ মানুষের প্রচেষ্টায় শান্তির রাষ্ট্র পাপের রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে তারই অনুসারীরা রাষ্ট্রের কর্ণধার হয়ে থাকে।
রাষ্ট্রের উৎপত্তি, উন্নয়ন ও ধ্বংস সৃষ্টিকর্তার মর্জিনির্ভর। প্রতিটি নাগরিকের উচিত রাষ্ট্রের আনুগত্য স্বীকার করা। রাষ্ট্রের আনুগত্য মানে সরকারের আনুগত্য। রাষ্ট্রের আনুগত্য না করলে মানুষ স্রষ্টার নিকট পাপী বলে গণ্য হবে। রাষ্ট্র একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, পার্থিব নয়।
অগাস্টিন রাষ্ট্রকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। যথা: স্বর্গরাজ্য এবং পার্থিব রাজ্য। স্বর্গরাজ্য সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও মহত্ত্বের কাজ। কিন্তু পার্থিব রাজ্য হলো স্বার্থপর, নিচুতা ও হিংসার প্রতীক।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, পার্থিব রাষ্ট্র ও বিধাতার রাষ্ট্র সম্পূর্ণ সম্পর্কহীন নয়। কারণ দু’টি রাষ্ট্রের অবস্থানই মাটির পৃথিবীতে, মহাকাশে নয়। অগাস্টিন বলেছেন, অতি মানবিক ব্যক্তিদের নিয়ে পৃথিবীতেই স্বর্গরাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব। সেক্ষেত্রে স্বর্গরাষ্ট্র ও পার্থিব রাষ্ট্রের অবস্থান হবে পাশাপাশি। পাশাপাশি অবস্থানের ফলে দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কও গড়ে উঠবে। সাধারণভাবেই এ দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক না থাকার কোন যুক্তিসংগত কারণ নেই।