স্বল্প সময়ে বাংলাদেশের সংবিধান লাভের কারণ ব্যাখ্যা কর।

অথবা, স্বল্প সময়ে বাংলাদেশের সংবিধান লাভের কারণ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভূমিকা: স্বাধীনতা লাভের পরই সর্বাগ্রে প্রয়োজন হয় একটি সংবিধানের। এ লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১১ জানুয়ারি ১৯৭২ সালের অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেন। স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র ৩২৫ দিনের মধ্যে বাঙালি জাতি একটি পূর্ণাঙ্গ ও যুগোপযোগী সংবিধান লাভ করে। নিচে স্বল্পসময়ে বাংলাদেশে সংবিধান লাভের কারণ বর্ণনা করা হলো:

১. গণপরিষদে আওয়ামী লীগের প্রাধান্য: বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। গণপরিষদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। গণপরিষদে মাত্র তিনজন বিরোধীদলীয় সদস্য ছিল। ফলে কোনো প্রকার বাধা ও বিতর্ক ছাড়াই সংবিধান গৃহীত হয়।

২. সংবিধান প্রণয়ণে বিরোধী মতবাদ ও শক্তির অনুপস্থিতি: গণপরিষদে বিরোধী দল ও মতাদর্শের উপস্থিতি ছিল না। গণপরিষদে প্রায় সকল সদস্যই ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। এছাড়া ভৌগোলিক, ভাষা, সম্প্রদায়, সংস্কৃতি প্রভৃতিতে কোনো প্রকার সমস্যা সৃষ্টি হয়নি। সংবিধান প্রণয়নের কাজ অতি সহজে ও সাবলীল গতিতে সম্পন্ন হয়।

৩. জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি: সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বৃহৎ শিল্পের জাতীয়করণ, সমাজতন্ত্রকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ- সকল ক্ষেত্রে মতৈক্য গড়ে উঠে। ফলে আওয়ামী লীগের দ্রুত সংবিধান প্রণয়ন সহজ হয়। বাঙালি জাতি দীর্ঘদিন ধরে যে দাবির জন্য সংগ্রাম করে আসছিল তা সংবিধানে রক্ষিত হয়।

৪. সংবিধান কমিটির দক্ষতা: বাংলাদেশে সংবিধান প্রণয়ন কমিটি ছিল একটি দক্ষ ও যোগ্য কমিটি। সংবিধান কমিটির সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩৪ জন সদস্য দ্রুত ও দক্ষতার সাথে সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন করে’। মূলত ভারত ও ইংল্যান্ডের সংবিধান অনুযায়ী সংবিধান প্রণয়ন করে। যার ফলে সংবিধান প্রণয়ন দ্রুত হয়।

৫. বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্ব: সংবিধান প্রণয়নে বঙ্গবন্ধুর একক কর্তৃত্ব ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা ও অবিসংবাদিতার কারণে দ্রুত সংবিধান প্রণয়ন সম্ভব হয়।

৬. সংবিধান প্রণয়নে গুরুত্ব প্রদান: ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর এবং ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের সমন্বয়ে গণপরিষদ গঠিত হয়। এ গণপরিষদের একমাত্র কাজ ছিল সংবিধান প্রণয়ন করা। এ গণপরিষদকে আইন প্রণয়নে কোনো অধিকার ও ক্ষমতা প্রদান করা হয়নি।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সংবিধান প্রণয়নের সকল অনুকূল পরিবেশ ছিল গণপরিষদের। গণপরিষদ কোনো প্রকার বাধাবিঘ্ন ছাড়াই অতি দ্রুত একটি উত্তম সংবিধান প্রণয়ন করে। এ সংবিধানে বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠে। এ সংবিধানকে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধানগুলোর মধ্যে একটি সংবিধান বলা হয়।