হিউমের সেফটি বাল্ব তত্ত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, হিউমের সেফটি বাল্ব তত্ত্ব সম্পর্কে কী জান?

অথবা, হিউমের সেফটি বাল্ব তত্ত্ব সম্পর্কে তোমার মতামত ব্যক্ত কর।

অথবা, হিউমের সেফটি বাল্ব তত্ত্ব বলতে কী বুঝ?

উত্তর: ভূমিকা: ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা এক যুগান্তকারী ঘটনা। ইংরেজ সরকারের – বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ক্ষেত্রে ভারতীয় জাতীয় – কংগ্রেস এক ঐতিহাসিক ভূমিকার অধিকারী। এক ঐতিহাসিক – সন্ধিক্ষণেই জাতীয় কংগ্রেসের সূচনা হয়েছিল। এ সময় ভারতীয় মধ্যবিত্ত শ্রেণি বিশেষ করে হিন্দু মধ্যবিত্ত শ্রেণির চিন্তাচেতনা ও রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষাকে শাসনতান্ত্রিক পথে পরিচালিত করার জন্য ভারতের বড়লাট লর্ড ডাফরিন ও ইংরেজ আমলা অ্যালন অক্টাভিয়ান হিউম একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করার প্রয়োজন অনুভব করেন। এরই ফলশ্রুতিতে ১৮৮৫ সালে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়।

হিউমের সেফটি বাল্ব তত্ত্ব: উইলিয়াম ওয়েডারবার্ন ১৯১৩ সালে প্রকাশিত তাঁর “Allan Octaavian hume. Father of the Indian National Congress.” নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ভাইসরয় লর্ড লিটনের কার্যকালের শেষদিকে হিউম এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ভারতবাসীর ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ প্রতিরোধের নির্দিষ্ট ব্যবস্থা থাকা দরকার। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জনসাধারণের আর্থিক দুর্দশা এবং বুদ্ধিজীবীদের সরকার বিরোধী চিন্তা-ভাবনার ফলে ভারতের ভবিষ্যৎ কল্যাণ সম্পর্কে বিপদের সংকেত পান। এমনকি হিউম নিজে একথা দ্বিধাহীনভাবে স্বীকার করে বলেছেন যে, সে সময় ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্র চলছিল। ভারতের শিক্ষিত সম্প্রদায় যাতে এ সম্ভাব্য বিপ্লবে যোগ না দেয় সেজন্য তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গঠনের পরিকল্পনা করেন। হিউম কংগ্রেসকে ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার স্বার্থে একটি সেফটি বাল্ব হিসেবে বর্ণনা করেন। তাঁর মতে ব্রিটিশ সরকারের শাসননীতির ফলে ভারতে ক্রমবর্ধমান বিরোধী শক্তির উদ্ভব ঘটে। যার নিরাপদ বহির্গমনের জন্য একটি বাল্ববের জরুরি প্রয়োজন। একথা অনস্বীকার্য যে, প্রধানত সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা পরিচালিত হয়ে হিউম এক সর্বভারতীয় একটি রাজনৈতিক সংস্থা গঠনে ব্রতী হন।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৮৮৫ সালে যে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয় তা একদিনে বা একা কারো উদ্যোগে
প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পশ্চাতে মুখ্য ভূমিকা ছিল সুদীর্ঘকাল থেকে ব্রিটিশ সরকারের শোষণ ও নির্যাতন। তাই শোষিত ভারতবাসীর দীর্ঘদিনের চেপে থাকা ক্ষোভের চরম মুক্তির আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ হলো একটি নিয়মতান্ত্রিক সংগঠন গড়ে তোলার প্রয়াস। এরই ফলশ্রুতিতে ১৮৮৫ সালে গঠিত হয় সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস।