হেস্টিংস ওয়ারেন ও নন্দকুমারের দ্বন্দ্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, ওয়ারেন হেস্টিংস ও নন্দকুমারের দ্বন্দ্ব সম্পর্কে আলোচনা কর।

অথবা, ওয়ারেন হেস্টিংস সংঘর্ষের সম্বন্ধে আলোচনা কর। ও নন্দকুমারের

উত্তর: ভূমিকা: ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি যেসব শাসকের কৃতকর্মে দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত তাদের মধ্যে ওয়ারেন হেস্টিংস ছিলেন অন্যতম। তার রাজত্বকালের একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় ছিল নন্দকুমারের বিচার ও ফাঁসি। নন্দকুমারের ফাঁসিকে পরবর্তীকালে দেশি-বিদেশি ঐতিহাসিকগণ বিচারের নামে হত্যাকাণ্ড বলে অভিহিত করেছেন।

১. নন্দকুমারের পরিচয়: নন্দকুমার দত্তের জন্ম ভারতের বীরভূম জেলার ভদ্রপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারে। নবাব আলীবর্দী খার শাসনামলে একজন সামান্য আমিনরূপে তার কর্মজীবনের সূচনা ঘটে। সিরাজ-উদ্‌-দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে যোগ দিয়ে তিনি ক্লাইভের আনুকূল্য লাভ করেন। ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে মীরজাফরের নবাব হলেন নন্দকুমার এবং নদীয়া ও বর্ধমান জেলার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব পান।

২. হেস্টিংস ও নন্দকুমারের মধ্যে দ্বন্দ্ব: রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত ব্যাপারে ভারতের গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের সাথে তার দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটে। গভর্নর জেনারেলের অবাধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে ব্রিটিশ সরকার যে কাউন্সিল গঠন করেন ঐ কাউন্সিলের নিকট ওয়ারেন হেস্টিংস ও কোম্পানির নানা দুর্নীতির কথা নন্দকুমার প্রকাশ করে দেন। এভাবে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

৩. নন্দ কুমারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ: ১৭৭৫ সালে নন্দকুমার কলকাতা কাউন্সিলের নিকট প্রেরিত এক পত্রে হেস্টিংসের বিরুদ্ধে মীর জাফরের বিধবা পত্নী মুন্নী বেগমের নিকট হতে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ পেশ করলে পরিষদের অধিকাংশ সদস্য এ অভিযোগের তদন্ত করতে = তৎপর হয়ে উঠলে তিনি কাউন্সিল বাতিল করে দেন। পক্ষান্তরে হেস্টিংস মোহ প্রসাদ নামক জনৈক ব্যক্তির মাধ্যমে নন্দকুমারের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে জালিয়াতির অভিযোগ আনয়ন করেন।

৪. নন্দকুমারের ফাঁসি ও মৃত্যুদণ্ড : ভবিষ্যতে যাতে কেউ তার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার অভিযোগ উত্থাপন করতে না পারে সেজন্য তিনি তার বন্ধু বিচারপতি এলিজা ইম্পের সাথে ষড়যন্ত্র করে নন্দকুমারকে ১৭৭৫ সালে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলান।

৫. ঐতিহাসিকদের মতামত: ঐতিহাসিক বেভারিজ, স্যার আলফ্রেড লয়াল প্রমুখ ঐতিহাসিকের মতে, হেস্টিংস আত্মমর্যাদা রক্ষা করার উদ্দেশ্যে নন্দকুমারের ফাসির ব্যবস্থা করেছিলেন। ঐতিহাসিক বাকী ও ইলিয়ট বলেন, “হেস্টিংস নন্দকুমারকে ইম্পের হস্তে হত্যা করেন।” সমসাময়িককালের ঐতিহাসিকের মতে, “নন্দকুমারের ফাঁসি হেস্টিংসের শাসনামলে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়।”

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ওয়ারেন হেস্টিংস সম্পূর্ণ প্রতিহিংসা পরায়ন হয়েই নন্দকুমারের বিচার এবং তার ফাঁসির ব্যবস্থা করেছিলেন। দণ্ডদানের পর নন্দকুমারের প্রাণভিক্ষার যে আবেদন হয় তা অগ্রাহ্য হয়। এমনকি নবাবের অনুরোধও প্রত্যাখান হয়েছিল।